সে এক বৃহৎ গবেষণাগার! দেখে মনে হতেই পারে চলে এসেছেন অজানা এক বিজ্ঞানের জগতে। সারি সারি কাচের গোলকের মতো কিছু কৃত্রিম যন্ত্র পাশাপাশি বসানো রয়েছে। জানেন কি তার ভিতরে কি রয়েছে? রয়েছে বহু মানুষের ভালোবাসার চিহ্ন, মানব শিশু। গল্প বলে মনে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে মোটেই এটি কোন রূপকথার গল্প নয়। অদূর ভবিষ্যতে ঘটতে চলা এক চমৎকার আবিষ্কার হল Artificial Womb বা কৃত্রিম গর্ভ।
হাশেম আল ঘাইলি (Hashem Al-Ghaili)
এরকমই এক ভবিষ্যৎকে বাস্তবায়ন করার কথা বললেন ইয়েমেনের মলিকিউলার বায়োটেকনোলজিস্ট হাশেম আল ঘাইলি। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরী করেন। হাশেম আল ঘাইলির ভিডিওগুলি ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে খুবই জনপ্রিয় এবং সেগুলি ভাইরাল হওয়া এখন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে হাশেম অ্যানিমেশন এর মাধ্যমে একটি ভিডিও তৈরি করেছেন, যার সাহায্যে তিনি বাস্তবে সম্ভব একটি আবিষ্কারের কথা তুলে ধরেছেন। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এরকম একটি গবেষণাগার তৈরি করা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না, যেখানে কৃত্রিম গর্ভের মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দসই সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন।। সোশ্যাল মিডিয়ায় এইরকম একটি অ্যানিমেশন ভিডিও রীতিমতো ঝড় তুলে দিয়েছে।
EctoLife গবেষণাগার
হাশেম আল ঘায়লি তার এই সুন্দর কল্পনা প্রসূত গবেষণাটির নাম দিয়েছেন EctoLife । ৭৫ টি কক্ষ নিয়ে তৈরি হবে এই কল্পনা প্রসূত গবেষণাগার। আর প্রতিটি কক্ষের মধ্যে থাকবে ৪০০টি করে কৃত্রিম গর্ভ। তাহলে সব মিলিয়ে এই গবেষণাগারে ৩০ হাজার শিশুর জন্ম দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যে কাছের গোলাপের মতো জিনিসটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেটি হল কৃত্রিম গর্ভ বা গ্রোথপড। এই কৃত্রিম গর্ভের ভিতরে আইভিএফ পদ্ধতিতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের ফলে তৈরি করা হবে ভ্রূণ।এই ভ্রূণ বড় হয়ে উঠবে এই কৃত্রিম গর্ভে। ভ্রুণের রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন সবই এই কাচের গোলকের মধ্যে মাপা হবে।
বেছে নিন নিজের সন্তান কৃত্রিম গর্ভ (Artificial Womb) এর সাহায্যে
বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, প্রতিবছর বহু শিশুর মৃত্যু হয় জন্মের সময় এবং বহু মা প্রসব করতে গিয়ে মারা যান।এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়ই হল Artificial Womb। শুধুমাত্র তাই নয় এছাড়াও আছে আরো চমক বাকি আছে। পিতা মাতা তার সন্তানের মধ্যে কোন কোন ভালো গুণ দেখতে চান তারা সন্তানের জন্মের আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
শিশু তৈরি হবে আপনার পছন্দমত
জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এই কৃত্রিম গর্ভের মধ্যে আপনি ঠিক করে ফেলতে পারবেন আপনার সন্তানের উচ্চতা, শারীরিক গঠন, গায়ের রং, গলার স্বর এমন কি তার বুদ্ধিমত্তাও। বিজ্ঞানীরা বলেছেন শিশুরা আজকাল বহু কঠিন রোগের শিকার হয়ে থাকে, তাই এই পদ্ধতির মাধ্যমে রোগ নির্মূল শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারবে। জিনগত বহু কঠিন রোগের নিরাময় মিলবে এই পদ্ধতির মাধ্যমে।
সন্তান নিতে যারা কষ্ট পাচ্ছেন তারাও এই পদ্ধতির সাহায্য নিতে সক্ষম
পাশাপাশি যে সমস্ত দম্পতিরা সন্তানের অপেক্ষায় দীর্ঘদিন কষ্ট পেয়েছেন এবং নানা রকম শারীরিক জটিলতার কারণে তারা সন্তান নিতে পারেনি সেই সমস্যার সমাধান ঘটতে চলেছে। বহু দেশ আজকাল জনসংখ্যার হ্রাসের সমস্যায় ভুগছে তারাও এই পদ্ধতি অবলম্বন করে সেই সমস্যা থেকে বের হতে পারবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, বহু সমস্যা সমাধান মিলবে এই কল্পনার প্রসূত চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
বৈজ্ঞানিকদের চিন্তাভাবনা
কিন্তু এই পদ্ধতিটি সাধারণ মানুষ কিভাবে গ্রহণ করবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন বিজ্ঞানীরা। কেননা বহু মানুষই এই কৃত্রিম পদ্ধতিকে খুব সহজে মেনে নিতে পারবেন না। এখনো বহু মানুষ সাধারণভাবেই সন্তান ধারণ করাতে বিশ্বাস করেন, তাদের পক্ষে কৃত্রিম গর্ভ খুব একটা সুবিধাজনক হবে না বললেই চলে। তাই অন্যান্য দিক থেকে কোন বাধা না আসলে নৈতিকগত দিক থেকে বাঁধা আসতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
হাশেম আল ঘাইলির সম্বন্ধে আরো জানতে পড়ুন -> https://en.wikipedia.org/wiki/Hashem_Al-Ghaili
এরকম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খবর জানতে নজর রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।