যখনই আপনার ওজন অকারণে বা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে, তার পেছনে অন্যতম কারণ হতে পারে ফ্যাটি লিভার (Fatty Liver)। অনেক সময় আবার উল্টোটা ঘটে, ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। সাধারণত খাবার থেকে সংগ্রহীত ফ্যাট লিভারে জমা হয়ে এই রোগের সৃষ্টি হয়। ফ্যাটি লিভার হলে অবশ্যই খাওয়া-দাওয়া বুঝে করতে হবে। জেনে নিন এর থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু উপায়।
সূচিপত্র (Table of Contents)
কেন হয় এই রোগ? / Fatty Liver Causes
মানবদেহে লিভার সাধারণভাবে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ ফ্যাট শোষণ করতে পারে। প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খেলে শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত চর্বি ধীরে ধীরে লিভারে জমতে শুরু করে। তবে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা মোটেই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়, এই রোগের হাত ধরে ভবিষ্যতে “সিরোসিস অফ লিভার” নামক রোগ হতে পারে। এছাড়া কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি এবং বিভিন্ন হরমোন জনিত রোগ, যেমন- থাইরয়েড ইত্যাদি রোগের কারণেও ফ্যাটি লিভারের প্রবণতা অনেকটা বৃদ্ধি পায়।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ / Fatty Liver Symptoms
অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি থাকলে ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
- পেটে ব্যাথা।
- পেট ভরা মনে হওয়া, খিদে কম পাওয়া।
- বমি বমি ভাব।
- অকারণে বা অস্বাভাবিকভাবে ওজন বেড়ে বা কমে যাওয়া।
- জন্ডিস।
- পেট এবং পা ফুলে যাওয়া।
- ক্লান্তি বা দুর্বলতা।
![ফ্যাটি লিভারের কোনো বিশেষ চিকিৎসা হয় না। তবে, সেরে উঠতে অবশ্যই মেনে চলতে হবে কয়েকটি নিয়ম। / There is no specific treatment for fatty liver. However, there are a few rules that must be followed in order to recover.](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/03/Fatty-liver.webp)
There is no specific treatment for fatty liver. However, there are a few rules that must be followed in order to recover.
কিভাবে নিরাময় হতে পারে ফ্যাটি লিভার? / Fatty Liver Treatment
সাধারণত ফ্যাটি লিভারের জন্য নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই। খাওয়া দাওয়াতে রাশ টানার মাধ্যমে এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ফ্যাটি লিভারে সাধারণত বিভিন্ন পর্যায়ে থাকে যেমন, গ্রেড ১, গ্রেড ২, এবং গ্রেড ৩। তবে গ্রেড ২ এবং গ্রেড ৩ এর ক্ষেত্রে রোগীদের অবশ্যই ডায়েটিশিয়ানদের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট ফলো করা উচিত। নিজেদের জীবনশৈলী এবং খাওয়া-দাওয়ার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে এই রোগের হাত থেকে মানুষ রক্ষা পেতে পারে।
কি কি খাবেন না? / Foods to Avoid in Fatty Liver
এই খাবারগুলি ভুল করেও ছুঁয়ে দেখবেন না।
- মাখন, ঘি, চিজ, ভাজাভুজি, বা অতিরিক্ত ফ্যাটজাতীয় খাবার।
- রেস্তোরাঁর খাবার বা কোনো প্যাকেজ্ড ফুড।
- রেড মিট খাবার তালিকা থেকে একেবারেই বাদ দিতে হবে।
- চিনি ময়দার খাবার না খাওয়াই ভালো।
- এছাড়া, মদ্যপান একেবারেই বর্জনীয়।
জীবনশৈলী কি ধরনের হওয়া প্রয়োজনীয়? / Fatty Liver Lifestyle Changes
কিছু কিছু নিয়ম পালন করা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। সেগুলি হল –
- এর সাথে অবশ্যই করতে হবে শরীরচর্চা। দিনে এক ঘন্টা নিয়ম করেও শরীরচর্চা করা প্রয়োজনীয়। শরীরচর্চার পরিবর্তে আপনি হাঁটাহাঁটিও করতে পারেন।
- প্রতিদিন নিয়মিত প্রায় তিন লিটার জল পান করতে হবে।
- বেশিক্ষণ ব্যবধান রেখে কখনোই খাবার খাবেন না। মোটা হয়ে যাচ্ছেন বলে যদি দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকেন তাহলেও কিন্তু আপনার রোগ অনেকাংশে বেড়ে যাবে। অবশ্যই আপনাকে বারে বারে খেতে হবে তবে পরিমাণটি হতে হবে সীমিত।
- প্রতিদিন আট ঘন্টার ঘুম অবশ্যই প্রয়োজনীয়। এই রোগের ক্ষেত্রে ঘুম একান্ত দরকার।
তালিকায় কোন কোন খাবার? / Foods to Eat in Fatty Liver
আজকাল বেশিরভাগ মানুষ কর্মব্যস্ত। তাই কাজের মাঝখান থেকে সময় বার করে বারবার খাওয়াটা খুবই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আপনি সাথে রাখতে পারেন মরশুম এর ফল। রাস্তার কাটা ফল কিংবা ফলের রস কখনোই খাবেন না। বরং খিদে পেলে খেয়ে নিন আস্ত একটা ফল। কম তেলমশলাযুক্ত খাবার অবশ্যই খেতে হবে। খিদে পেলে খেতে পারেন মুড়ি, পপকর্ন, ড্রাই ফ্রুটস ইত্যাদি। তবে বাইরের রেস্তোরার খাবার কয়েকদিন না খাওয়াই ভালো। যদি ডায়েট মেনে খাবার খান তাহলে অবশ্যই তিন মাসের মধ্যে গ্রেড ওয়ান ফ্যাটি লিভার থেকে আপনি সেরে উঠবেন।
সঠিক জীবনশৈলী ও খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েটের মাধমেই আপনি ফ্যাটি লিভার থেকে সেরে উঠতে পারেন। তবে যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে দ্বিধা বোধ করবেন না।
ফ্যাটি লিভার সম্বন্ধে আরো জানতে পড়ুন উইকিপিডিয়ার এই পাতাটি।
এই ধরনের আরো খবর জানতে অবশ্যই চোখ রাখতে হবে বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।