Site icon Bengali News 365 | বাংলা খবর, প্রতিদিন, বছরের ৩৬৫ দিন।

BF.7 Variant: বিএফ.৭ নিয়ে আতঙ্কিত হচ্ছেন? ভারতে প্রভাব কতটা?

BF7 Variant

টানা দু’বছর করোনার প্রলয়ে থমকে ছিল গোটা বিশ্ব। করোনার চোখ রাঙানি থেকে মুক্তি পেয়ে যখন পৃথিবী আবার হাঁসতে শুরু করল, ঠিক তখনই গুঞ্জন শুরু হল বিএফ.৭ (BF.7 Variant) -এর।  না এই ‘বিএফ’ মানে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ বা ‘বয়ফ্রেন্ড’ নয়, এই বিএফ.৭ করোনা ভাইরাস (Coronavirus) -এর ওমিক্রণেরই আরেকটি নতুন ধরণ, যা জেনেটিক মিউটেশনের কারণে ওমিক্রণের থেকেও শক্তিশালী এক নতুন রূপ ধারণ করেছে।

 COVID-19 Omicron BF.7 Variant - করোনা ভাইরাস-এর বিএফ.৭ ধরণ
COVID-19 Omicron BF.7 Variant – করোনা ভাইরাস-এর বিএফ.৭ ধরণ

বিএফ.৭ (BF.7 Variant) টি আসলে কি?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ওমিক্রণ বা বিএফ ৫ -এর নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট হল এই বিএফ.৭ (BF.7 Variant)। এর আগে গবেষণার দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল যে, যদি কোন মানুষ বিএফ ৫ দ্বারা সংক্রামিত হয়, তবে তার দ্বারা আরও চারজন সংক্রামিত হতে পারে। কিন্তু বর্তমান গবেষণায় উঠে এসেছে এক ভয়ানক তথ্য। বিএফ.৭ -এর সংক্রমণ ক্ষমতা নাকি বিএফ ৫ -এর থেকেও চার গুণেরও বেশি।
কেউ কেউ আবার বলছেন করোনা ভাইরাসের এই নতুন সংস্করণটি পূর্বে একাধিক সংস্করণের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে কেউ আবার মনে করছেন এই ভ্যারিয়েন্টটি একেবারেই নতুন অচেনা অন্য কোন প্রজাতি তবে এর মধ্যে কোন বক্তব্য যে আসলে সত্যি তা এখনো জানা যায়নি

বিএফ.৭ (BF.7 Variant) -এর সংক্রামক ক্ষমতা

সাধারণতঃ কোভিড-১৯ আক্রান্তরা প্রথম ৫ দিন পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়াতে পারে না। তবে হিসেব অনুযায়ী, যদি একজন ব্যক্তি বিএফ.৭ (BF.7 Variant) ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রামিত হয়, তবে তার থেকে সংক্রমনের আশঙ্কা থাকবে আরও ১০ থেকে ১৮.৬ জনের। এই অতি সংক্রামক বিএফ.৭ -কে আর ১৮ নামেও নামাঙ্কিত করা হয়েছে। এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের ইনকিউবিশন পিরিয়ডটি খুবই কম।
যার ফলে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে খুব সহজেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য মানুষদের মধ্যে। তবে এই ভ্যারিয়েন্টে কতটা ভয়ানক সেটি এখনো পরিষ্কার ভাবে জানা যায়নি। করোনার দুটো ডোজ নেওয়া মানুষেরাও কিন্তু বিএফ.৭ দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে।

বিএফ.৭ (BF.7 Variant) -এর লক্ষণগুলি কি কি?

করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মতোই প্রায় একই উপসর্গ এক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। যেহেতু বিএফ.৭ (BF.7 Variant) সরাসরি শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে, তাই সর্দি, কাশি, জ্বর, বুকে ব্যথা, গলা ব্যথা ইত্যাদি প্রধান উপসর্গ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তি বিশেষে উপসর্গের তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। কারণ কোন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বমি এবং ডায়রিয়াও পর্যন্ত হতে দেখা যাচ্ছে এই বিএফ.৭ -এর আক্রমণে। এছাড়া যে সমস্ত মানুষের ইমিউনিটি পাওয়ার খুবই দুর্বল, তাদের স্বাস্থ্যের খুব দ্রুত অবনতি ঘটছে।

বর্তমানে বিএফ.৭ (BF.7 Variant) -এর দৌরাত্ম কতদূর?

প্রথম করোনার মতো বিএফ.৭ (BF7 Variant) -এর উৎপত্তিও হয় চিনে। ঠিক আগের ছবি যেন ফুটে উঠেছে চীনে। চীনের ঝেজিয়াং নামক শহরে বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী আক্রান্তদের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ। করোনা ভাইরাসের এই বিশেষ ভ্যারিয়েন্টটি বর্তমান প্রচলিত প্রতিষেধক গুলির সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম সেই কারণেই এটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

ভারতে বিএফ.৭ (BF.7 Variant) প্রভাব

টাটা ইন্সটিটিউট অফ জেনেটিক্স অ্যান্ড সোসাইটির ডিরেক্টর রাকেশ মিশ্র জানিয়েছেন বিএফ.৭ (BF.7 Variant) -এর এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ভারতে এখনো পর্যন্ত তেমন কোন চিন্তার কারণ নেই। তিনি এক সাক্ষাত্‍কারে সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, “এটা ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট। যার মূল গঠনতন্ত্র পুরোপুরি ওমিক্রনের মতোই। শুধুমাত্র কয়েকটি ছোট পরিবর্তন রয়েছে। তবে সেখানে তেমন কোনও বড় পরিবর্তন আসেনি। আমরা ওমিক্রন ওয়েভের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। তাই আমাদের এটা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। মূলত এটা একই ভাইরাস।”
ইতিমধ্যেই ওমিক্রণের একাধিক সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমন ভারতে দেখা গিয়েছে। তাই নতুন করে বিএফ.৭ (BF.7) ভারতে আর ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

চীনে বিএফ.৭ (BF.7) -এর প্রভাব

চীনে এই বিএফ.৭ (BF.7) -টির এইরূপ ভয়াবহতার মূল কারণ হলো এর আগে সেখানকার জনগণ কোনরকম সাব-ভ্যারিয়েন্টের শিকার হয়নি। যার ফলে প্রথমবার এরকম কোনো সাব-ভ্যারিয়েন্টের এর সামনে পড়ায় সে দেশের অবস্থা ভারতের দ্বিতীয় ওয়েবের মতো হয়েছে। তাছাড়া চীনে বিএফ.৭ (BF.7) -এর ভয়াবহতার জন্য দায়ী করা হচ্ছে চীনের ‘জিরো-কোভিড পলিসি’-কে। তাছাড়া করোনা নিয়ে চীনের নাগরিকদের যথেষ্ট সচেতনতার অভাবও তাদের এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ।

টিকাকরণের উপকারিতা

তবে এটিও ঠিক, চীনের যে পরিমাণ জনসংখ্যা তাতে কখনোই সেদেশে সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়ায়নি। উল্টোদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েবের সময় ভারতবর্ষের সব বয়সে মানুষকে ব্যাপক হারে টিকাকরণ এবং বুস্টার ডোজ করানো হয়েছে। যার ফলে ওমিক্রনের এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট ভারতীয় জনগণের উপর খুব বেশি চড়াও হতে পারবে না। উল্টোদিকে চীন তাদের বয়স্ক লোকের জন্য সেই ভাবে কোন টিকাকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। চীনের আক্রান্তদের সংখ্যার উপর নজর দিলেই বোঝা যাবে যে, সেখানকার যুবসমাজের তুলনায় বয়স্ক লোকেরা এই বিএফ.৭ (BF.7 Variant) -এর দ্বারা বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন।

ভারতে সতর্কতা

তবে এ বিষয়ে কোন গ্যারান্টি নেই যে, ভবিষ্যতে করোনার আরো কোন শক্তিশালী সাব-ভ্যারিয়েন্ট উৎপন্ন হবে না। তাই আমাদের দেশে ব্যাপক হারে টিকাকরণ হয়েছে বলে উৎফুল্ল হয়ে লাগামছাড়া চলাফেরার কোন প্রয়োজন নেই। বিএফ.৭ (BF.7 Variant) -এর এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট টি ভয়ানক না হলেও মাস্ক পরা এবং অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়িয়ে চলা জরুরী।

কোভিড-১৯ ওমিক্রন সাব-ভেরিয়েন্ট বিএফ.৭ সম্বন্ধে আরো জানতে উইকিপিডিয়াতে সংশ্লিষ্ট পাতাটি পড়ুন

এই রকম আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Exit mobile version