Site icon Bengali News 365 | বাংলা খবর, প্রতিদিন, বছরের ৩৬৫ দিন।

Shakti Peeth / Sati Pith: এটি ৫১ সতীপীঠের “এক পীঠ”, একান্ত ‘মনস্কামনা’ থাকলে অবশ্যই আসুন

পশ্চিমবঙ্গে শক্তিপীঠ/সতীপীঠ - Shakti Peeth / Sati Pith in West Bengal

পশ্চিমবঙ্গে শক্তিপীঠ/সতীপীঠ - Shakti Peeth / Sati Pith in West Bengal

যে জায়গার সম্পর্কে কথা বলছি সেটি ৫১ শক্তিপীঠের (Shakti Peeth) বা সতীপীঠের (Sati Pith) ‘এক পীঠ’। যে কোন ‘মনস্কামনা’ নিয়ে আসলে খালি হাতে ফিরে যেতে হয় না, তাই ছুটে আসেন অগণিত ভক্ত।

পৌরাণিক কাহিনী

সত্য যুগে দক্ষের যজ্ঞে ‘মা সতী’ স্বামী নিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত‍্যাগ করেন। মহাদেব (Mahadev) ক্রদ্ধ হয়ে তারই আংশ বীরভদ্রকে পাঠান দক্ষকে বধ করার জন্য। তারপরই দেবাদিদেব মহাদেব (Devadidev Mahadev) সতীর শোকে সতীর দেহ নিয়ে শুরু করেন তাণ্ডবনৃত্য। ঘনিয়ে আসে মহাপ্রলয়; ফলে ভগবান বিষ্ণু শিব ঠাকুরকে (Lord Shiva) থামানোর জন্যে সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খণ্ডিত করেন ৫১ ভাগে। এই অংশ গুলো যেখানে যেখানে পরেছে সেখানে সেখানে একটি করে শক্তিপীঠ (Shakti Peeth) স্থাপিত হয়েছে। এগুলোকেই সতীপীঠ (Sati Pith) বলে। বর্তমানে এগুলি তীর্থেস্থানে পরিণত হয়েছে। আর আমরা যে পীঠটির কাথা এখন বলছি এখানে দেবীর অধঃ ওষ্ঠ (অধর / নিচের ঠোঁট) পতিত হয়। তাই এই স্থানটি ‘অধরেশ্বরী’ নামে পরিচিত।

শক্তিপীঠ/সতীপীঠের উৎপত্তি - Origin of Shakti Peeth / Sati Pith
শক্তিপীঠ/সতীপীঠের উৎপত্তি – Origin of Shakti Peeth / Sati Pith

কিভাবে জনমুখে প্রচলিত হল?

কোন এক সময় এই স্থানে খুব জঙ্গল ছিল আর নাম ছিল খুলারামপুর বা তুলারামপুর। পরবর্তীতে এই গ্রামের নাম দক্ষিণ ডিহি হয়।এইসময় গ্রামে কিছু কৃষক বাস করত তারা পাশের মাঠেই চাষাবাদ করত। ঈশানি নদীর ধারে অবস্থিত সেইস্থান ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা যে কারনে দিনের বেলাতেও ওখানে কেউ যেত না। একদিন কৃষকরা চাষ করতে গিয়ে এক সাধুবাবাকে জঙ্গলে ধ‍্যানমগ্ন দেখতে পায়ে তাড়া কৌতূহলী হয়ে দলবদ্ধভাবে তার কাছে যায় ও তাকে প্রণাম করেন। তাদের সামনেই সাধুবাবা সেখানে যজ্ঞ করেন এবং যজ্ঞ শেষে তিনি যজ্ঞস্থানে একটি ত্রিশূল পুঁতে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। চলে যাবার আগে বলে যান, এটি একটি সতীপীঠ (Sati Pith)।

দেবী ‘ফুল্লরা’ ও ভৈরব ‘বিশ্বেশ’

এখানে দেবী ‘ফুল্লরা’ ও ভৈরব ‘বিশ্বেশ’ । এখানে একটি দেবীর দন্তুরা চামুণ্ডা মূর্তি বিরাজমান। এখানে দেবীকে অধরেশ্বরী নামে পূজা করা। এখানে আছে এক প্রাচীন শিলামূর্তি। মন্দিরের ভিতরের শিলাখণ্ডটি অনেকটা ওষ্ঠের মত দেখতে। এই শিলার রং আবার টুকটুকে লাল। মন্দিরের একটি অষ্টধাতুর মূর্তিও ছিল কিন্তু সেটি চুরি হয়ে গেছে। এখানে দেবীকে ডাকা হয় ফুল্লরা বলে। ভৈরব হলেন বিশ্বেশ।

পীঠটির ভৌগলিক অবস্থান

পশ্চিমবঙ্গের, বর্ধমান জেলার নিরোল গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণডিহি গ্রামে অবস্থিত এই সতীপীঠ (Sati Pith)। উত্তরে ঈশাণী নদী আর কিছুদূরে শ্মশান, এই শক্তিপীঠকে (Shakti Peeth) নিরিবিলি পরিবেশ দিয়েছে। এখানে আজও গাছে গাছে হরেক পাখি দেখা যায়। রাতের বেলা শোনা যায় পেঁচার ডাক। আর প্রতিটি প্রহরে এখানে আজও শেয়াল ডাকার শব্দ শোনা যয়া। এই সতীপীঠের (Sati Pith) আরেক নাম ‘অট্টহাস’।

স্থানীয় মানুষের আস্থা

আজও স্থানীয় মানুষেরা যেকোনো ধরনের শুভ কাজের পূর্বে এই শক্তিপীঠে (Shakti Peeth) পুজো না দিয়ে শুভকাজ সারেন না। যেকোনো ধরনের বিপদে পড়লে সতী মায়ের কাছে জানিয়ে যান, সেক্ষেত্রে নাকি বিপদটি আলৌকিক ভাবে কেটে যায়। এমনকি যে কোন ধরনের মনের ইচ্ছে জানিয়ে গেলেও তা পূরণ হতে লাগে না বেশি সময়।

উৎসবের মরশুম

সারা বছরই এখানে ভক্তের সমাগম ঘটে। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস এ পাঁচ মাস এখানে ভক্তের সমাগম বৃদ্ধি পায়। বহু ভক্তের ইচ্ছাপূরণ হয়েছে এখানে পূজা দিয়ে। যে কারনে দোলের সময় এখানে বিশাল মেলা বসে। এই শক্তিপীঠে (Shakti Peeth) থাকার জন্য অতিথি নিবাস আছে। মন্দির থেকেই ভক্তদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

কীভাবে যাবেন?

কাটোয়া থেকে কেতুগ্রাম হয়ে ফুটিসাঁকোয় রাস্তা ধরে গেলে এই মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া যায়। কাটোয়া থেকে এর দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। শিয়ালদহ থেকে রামপুরহাট প্যাসেঞ্জারে চেপে আমোদপুরে নেমে সেখান থেকে নিরোল বাসস্ট্যান্ডে যাওয়া যায়। সেখান থেকে অটো বা টোটোয় চেপে মন্দিরে যাওয়া যেতে পারে।


৫১ শক্তিপীঠ (Shakti Peeth) বা সতীপীঠ (Sati Pith) সম্বন্ধে আরো জানতে পড়ুন উইকিপিডিয়ার এই পাতাটি -> wikipedia.org/wiki/Shakti_Pitha

এই রকম আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Exit mobile version