Site icon Bengali News 365 | বাংলা খবর, প্রতিদিন, বছরের ৩৬৫ দিন।

Weird History: বিচিত্র পেশা, মানুষই মানুষের অ্যালার্ম ঘড়ি

Weird history of the life of the knocker uppers in Britain & other parts of the Europe

Weird history of the life of the knocker uppers in Britain & other parts of the Europe

Weird History Facts: ইতিহাসের কিছু অদ্ভুত ঘটনা থাকে যা জানলে আমরা অনেকেই অবাক হয়ে যাই। বর্তমান সময়ে সবথেকে প্রয়োজনীয় একটি জিনিস হল ঘড়ি, যা সময় নির্ধারণ করতে সাহায্য করে এবং সময়মতো ঘুম থেকে উঠতেও সাহায্য করে। যদিও মোবাইল ফোনই আজকাল ঘড়ির কাজ করে দেয়। মানুষ ঘড়ি ছাড়া একদিনও অতিক্রম করার কথা ভাবতেও পারে না। কিন্তু ভালো করে ভেবে দেখুন তো আগেকার দিনের মানুষ এই সুবিধা কোথা থেকে পেতো?

Weird history: মানুষরুপী অ্যালার্ম ঘড়ি
Human alarm clocks

প্রযুক্তি এত উন্নত না হওয়ায় আগেকার দিনে অ্যালার্ম ঘড়ির কোন রকম ব্যবস্থা ছিল না। তাহলে ভোরবেলায় কিভাবে মানুষের ঘুম ভাঙত? গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা যদিও মোরগের ডাকে ঘুম থেকে উঠে পড়তো কিন্তু শহরাঞ্চলের মানুষেরা কিভাবে উঠতো ঘুম থেকে? অ্যালার্ম ঘড়ির পরিবর্তে তখন মানুষই অ্যালার্ম ঘড়ির কাজ করতো। ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ইউরোপের কিছু অংশে ১৮ শতক বা ১৯ শতকের প্রথমার্ধে কিছু কর্মী নিয়োজিত ছিল মানুষদের ঘুম থেকে তোলার জন্য, এদের বলা হতো ‘নকার আপার‘ (Knocker Upper)।

Weird history of the knocker uppers in Britain / ব্রিটেনের নকার আপারদের অদ্ভুত ইতিহাস
Weird history of the knocker uppers in Britain / ব্রিটেনের নকার আপারদের অদ্ভুত ইতিহাস

Weird history: কারা ছিল এই ‘নকার আপার’?
Who were the knocker uppers?

১৮ শতক থেকে ১৯ শতকের সময় অর্থাৎ শিল্প বিপ্লবের সময়ে অ্যালার্ম ঘড়ি এত বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি। এমনকি যেসব ঘড়ি ছিল তা অত্যন্ত সস্তাও ছিল না এবং যথেষ্ট নির্ভরযোগ্যও ছিল না। সেখান থেকেই জন্ম হয় ‘নকার আপার’ পেশাটির। এই পেশাটির জন্ম নেওয়ার পিছনে মূল কারণ ছিল ব্রিটেনের কারখানার কর্মীরা, যাদের সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে হতো কিন্তু অ্যালার্ম ঘড়ি কেনা তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল।

Weird history: কেন দরকার ছিল এই পেশার?
Why were the knocker uppers needed?

শিল্পবিপ্লবের যুগে ক্রমবর্ধমান শিল্পের উন্নতির ফলে কলকারখানাতে দরকার ছিল প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক এবং ওয়ার্কিং আওয়ার। দেরি করে যাওয়া, মাইনা থেকে টাকা কেটে নেওয়া, এমনকি চাকরি চলে যাওয়ার ভয় পর্যন্ত ছিল। ভীষন খাটনি এবং স্বল্প মাইনেতে শ্রমিকদের দিন গুজরান করতে হতো। চাকরি বাঁচানোর জন্য এবং যাতে মাইনা থেকে টাকা কাটা না যায় সেই ভয়ে কর্মীরা নকার আপার ভাড়া করত।

Weird history: কেমন ছিল তাদের ঘুম ভাঙ্গানোর পদ্ধতি?
How did the knocker uppers work?

নকার আপাররা বড় বড় শহর যেমন ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে কাজ করতো। প্রথমে তারা বাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে কর্মীদের ঘুম থেকে তুলতো। কিন্তু এই পদ্ধতিটি যথেষ্ট অকার্যকর এবং ভুল ছিল। এর ফলে শুধুমাত্র পরিবারের বাকি সদস্যরাই নয় প্রতিবেশীরাও সকাল পাঁচটা থেকে ছটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়তো। যা সবার কাছেই অত্যন্ত বিরক্তকর ছিল। এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ফলে তারা পদ্ধতি বদল করে দেয়।

উপর তলার ঘরের জন্য

যেসব কর্মীরা বাড়ির উপর তলার বেডরুমে থাকতো, তাদের জানলার কাছে বড় লাঠি দিয়ে নকার আপাররা দুই তিনবার ধাক্কা দিত। কেউ কেউ ২ থেকে ৩ বার ধাক্কা দিয়ে চলে যেত, আবার অনেকেই ততক্ষণ পর্যন্ত ধাক্কা দিত যতক্ষণ না শ্রমিকটি জানলা খুলে দেখা দিত। মনে করা হয় নকার আপাররা প্রতিদিন ১০০ জন শ্রমিককে ঘুম থেকে তুলতো।

পড়ুন -> May Day: কেন ১লা মে সারা বিশ্বে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়?

কয়েকজন বিখ্যাত ‘নকার আপার’দের নাম এবং তাদের উপার্জন?

মেরি স্মিথ

মেরি স্মিথ এর শ্রমিকদের ঘুম থেকে তোলার পদ্ধতি ছিল একেবারে অন্যরকম। তিনি লন্ডনের শ্রমিকদের জানালার কাছে শুকনো মটর ছুড়ে মারতেন। সপ্তাহে তিনি ছয় পেনস মতো আয় করতেন।

চার্লস নেলসন

চার্লস নেলসন নকার আপার হিসাবে দীর্ঘ ২৫ বছর কাজ করেছেন। তিনি ইস্ট-লন্ডনের ডাক্তার, ব্যবসায়ী এবং কর্মীদের ঘুম থেকে তুলতেন।

ডরিস উইগ্যান্ড

ডরিস উইগ্যান্ড এমন একজন ব্যক্তি যিনি প্রথম ব্রিটিশ রেলওয়ের নকার আপার ছিলেন। তিনি শ্রমিকদের শর্ট নোটিশে জানাতেন তাদের শিফটে জরুরী প্রয়োজন ছিল।

মানুষের অকৃতজ্ঞতা

অন্যান্য বাকি নকার আপাররা প্রতি সপ্তাহে সামান্য কয়েক পয়সা আয় করতেন। কর্মীদের তারা ঘুম থেকে তুলতো তারা নকার আপারদের পাত্তা দিতেন না। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা তো দূরের কথা, এমন অনেক কর্মীরা ছিল যারা নকার আপারদের গায়ে ভোরবেলা বালতি দিয়ে জল ছুড়ে মারতো।

Weird history: কে জাগাতো এই ‘নকার আপার’দের?
Who used to wake up the knocker uppers?

যেসব ‘নকার আপার’দের উপর ছিল সমস্ত কর্মীদের ঘুম থেকে তোলার দায়িত্ব, তারা নিজেরা কিভাবে ঘুম থেকে উঠত? তারা ছিল অনেকটা প্যাঁচার মতো। সারারাত তারা জেগে থাকতো এবং ভোরবেলা কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তারা সারাদিন ঘুমাত।

Weird history: কিভাবে হারিয়ে গেলো ‘নকার আপার’রা?
How did the knocker uppers vanish?

যুগের সাথে সাথে অ্যালার্ম ঘড়ি কেনা সহজলভ্য হয়ে যায়। ফলে ১৯৪০ থেকে ৫০ দশকের মধ্যে এই নকার আপাররা কাজ হারাতে থাকে। ১৯৭০ সালেও এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য উত্তর ইংল্যান্ডের কিছু কিছু জায়গায় ‘নকার আপার’দের নিযুক্ত করা হতো। এই নকার আপাররা ছিল ১৮ শতক থেকে ১৯ শতকের কর্মীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এদের ফলেই তারা ঘুম থেকে উঠে কাজে যেতে পারত।


পড়ুন -> Kolkata Metro Ticket History: মেট্রো টিকিটের বিবর্তন নিয়ে প্রদর্শনী

‘নকার আপার’দের সম্বন্ধে আরো জানতে পড়ুন উইকিপিডিয়ার এই পাতাটি

এই রূপ আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Exit mobile version