Site icon Bengali News 365 | বাংলা খবর, প্রতিদিন, বছরের ৩৬৫ দিন।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি? এর আদৌ কি কোনো ভবিষ্যৎ আছে?

গত এক দশকে প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্ত আর মানুষের পারিপার্শ্বিক ক্রমবর্ধমান কাজের চাপ ও মানসিক চাপ উভয়ই পাল্লা দিয়ে বাড়ার ফলে মানুষের হাতে সময় দিন দিন কমে আসছে। তাই তারা তাদের সমস্ত দরকার, সমস্ত সমস্যা এক জায়গায় বসে কম সময়ে মিটিয়ে ফেলতে চাইছে। আর পৃথিবীর সমস্ত বিপণন সংস্থাগুলি তাদের ক্রেতা বা উপভোক্তাদের এই ট্রেন্ডকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে জন্ম দিয়েছে নতুন এক বিপণন পন্থা। যার নাম এক কথায় ডিজিটাল মার্কেটিং।

ডিজিটাল মার্কেটিং আদতে কী?

তাহলে কি এই ডিজিটাল মার্কেটিং? কেন পৃথিবী জুড়ে আলোচ্য এবং প্রযোজ্য একটি শব্দ। আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং হলো কোনো বস্তু বা কোনো উপাদান মার্কেটিং করার একটি পন্থা যা ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সরাসরি শারীরিকভাবে মানুষের কাছে না পৌঁছে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ বা ডেস্ক টপ বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটের মধ্য দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উপভোক্তা বা গ্রাহক বা ক্রেতার সমীপে উপস্থিত করা। বাচ্চারা মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলার থেকে ঘরে বসে মোবাইলে ক্রিকেট খেলতে বেশি পছন্দ করে। মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে ঠিকানা খোঁজার জন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করার থেকে গুগল ম্যাপে ঠিকানা খুঁজে নিতে বেশি পছন্দ করে। তেমনি মানুষ সরাসরি দোকানে গিয়ে অনেকটা সময় নষ্ট করে কোনো জিনিস কেনার থেকে ঘরে বসে ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটের মাধ্যমে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি বিকল্পের মাঝখান থেকে নিজের পছন্দকে বেছে নিতে বেশি আগ্রহী। ৯০ এর দশকে ইন্টারনেট আবিস্কার হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মার্কেটিং পন্থা। প্রথাগত ব্যবসায়িক বিপণনের (Traditional business marketing) মতো এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু নিয়ম এবং নীতি মালা রয়েছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং বনাম গতানুগতিক ব্যবসা

ইতিমধ্যে আপনারা ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বেশ খানিকটা ধারনা পেয়েছেন। এক কথায় বলতে গেলে, ইন্টারনেটের হাত ধরে যে ব্যবসাটি সম্পন্ন হয়, সেটিই হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। এটি মানুষের কাছে নতুন হলেও, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই পন্থাটি অতীব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি যে সমস্ত মানুষ এতদিন যাবৎ ব্যবসার নামে ভয় পেত, তারাও আজ ডিজিটাল মার্কেটিং এর হাত ধরে নিজেদের ব্যবসা গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। অধিকাংশ নারীরা আজ স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারছে এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্যে, কারণ তারা বাইরে না বেরিয়ে ঘর থেকেই করতে পারছে তাদের মনের মতো ব্যবসা। সংসারের সব কাজ সামলে ব্যবসাটি হয়ে উঠেছে অনেক সহজলভ্য। একটি ক্লিকেই হতে পারে আজ তাদের স্বপ্ন পূরণ।

অন্যদিকে গতানুগতিক বিপনন সংস্থার জন্য বেশ কসরত করতে হয়। প্রথমত, মোটা অংকের অর্থের জোর থাকা মানুষজনই একমাত্র এই ব্যবসা করতে সাহস পান। কারণ, এই ব্যবসায় লাগে – উপযুক্ত জায়গা, দোকানঘর, প্রচুর পরিমাণে পণ্য, লোকবল এবং নিজের মূল্যবান সময় ও শারীরিক পরিশ্রম। এই ব্যবসায় আপনাকে প্রতিটি দিন দোকানে সকাল বিকেল বসে ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যদি ব্যবসাটি সফল হয় তবে তো ভালোই, কিন্তু যদি ব্যবসাটি সাফ্যলতা না পায় তবে পরিবর্তে আপনি পাবেন এক অপরিসীম মানসিক যন্ত্রনা। এই ব্যবসার প্রচারও বেশ খরচ সাপেক্ষ। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে, পোস্টার ছেপে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজ্ঞাপনপত্র বিলি করে, গাড়ি করে রাস্তায় রাস্তায় মাইক বাজিয়ে এই ব্যবসার প্রচার করা হয়ে থাকে। এছাড়া, দোকানঘরসহ পণ্যের পাহারার জন্য লোক নিয়োগ করতে হয়। ব্যক্তিগত জীবনের বহু তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানই বাদ দিতে হয় এই গতানুগতিক ব্যবসার জন্য।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটি পরিষ্কার যে, বর্তমান ব্যস্ত জীবনযাত্রার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিংই তুলনামূলক শ্রেয়।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ

ডিজিটাল মার্কেটিং-কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় – অনলাইন ও অফলাইন। আবার অনলাইন মার্কেটিং-এরও অনেক প্রকারভেদ রয়েছে।

অনলাইন মার্কেটিং:-

অনলাইন মাধ্যমে এই ব্যবসা বিভিন্ন পদ্ধতিতে সম্ভব হয়।

অফলাইন মার্কেটিং:-

অফলাইন মার্কেটিং বলতে টেলিভিশন, বিল বোর্ড, রেডিও, ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবসার প্রচার করাকে অফলাইন মার্কেটিং বলে।

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?

আমাদের জীবনযাপনে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। টেকনোলজির ছোঁয়ায় জীবনের প্রতিটা ধাপ আজ উন্নত। এবং মানুষও বর্তমানে টেকনোলজিকে সাদরে গ্রহণ করেছে। আজ বিশ্বের প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ অধিকাংশ সময়ই নেটদুনিয়ায় সক্রিয়। যে কোনো ঘটনার সত্যতা যাচাই থেকে শুরু করে জিনিসপত্রের মূল্য নির্ধারণ সব ক্ষেত্রেই মানুষ আজ ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। তাই ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকেও ইন্টারনেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে।

যে কোনো ব্যবসাকে প্রসারিত করতে হলে তার সঠিক প্রচার করা ভীষন দরকার। সম্প্রতি মানুষ ইন্টারনেটকে তাদের প্রধান নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে নির্বাচিত করেছে। আর সেই কারণেই, ব্যবসায়ীদেরকে প্রচারের প্রধান অস্ত্র করে নিতে হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যকে। এভাবেই ধীরে ধীরে ডিজিটাল মার্কেটিং আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে প্রবেশ করেছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর বেশ কিছু সুবিধা বিদ্যমান।

আজকের এই প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় চাকরির বাজারে যেন আগুন লেগেছে। বেকারত্বের জ্বালায় ভুগতে হচ্ছে হাজারো যুবক-যুবতীর। আর সেই কারণেই যুব সমাজ আজ ঝুঁকছে ব্যবসার প্রতি। যদিও যুব সমাজ আজ অত্যন্ত ডিজিটাল মিডিয়া নির্ভরশীল। তারা প্রতিটি পদক্ষেপে একজন মানুষ অপেক্ষা ইন্টারনেটকে প্রধান্য দেয় বেশী। সেটা হওয়াটাও স্বাভাবিক, কারণ এর থেকে দ্রুততম পদ্ধতিকে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার আর অন্য উপায় নেই। এতদিন পর্যন্ত বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের এক অন্যতম প্রধাণ মাধ্যম ছিল পত্রিকা। যে কোনো পত্রিকাতেই বিজ্ঞাপন দিতে হলে তা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। তার নিরীখে, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন অনেকই সহজলভ্য।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক, ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তাগুলি।

ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও স্বপ্ন সত্যি করার সুযোগ করে দিয়েছে। যেসমস্ত সাধারন মানুষ অর্থের অভাবে পিছিয়ে পড়ছিলেন, তারা এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর হাত ধরে নিজেদের স্বপ্নের পথে পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছেন। এটি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই লাভজনক।

কিভাবে করবেন এই ডিজিটাল মার্কেটিং?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা জানলাম, কিন্তু এর শুভারম্ভ কেমন করে করবেন? – এটাই ভাবছেন তো? তবে চলুন সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমত, হাতে মোবাইল ফোন থাকলেই যে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং- এ পারদর্শী হবেন, তেমনটা নয়। আপনাকে জানতে হবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর খুটিনাটি বিষয়বস্তু। না জেনে কোনোকিছু করাটা নিছকই ব্যর্থ হবে। যেসমস্ত পদক্ষেপ প্রয়োজনীয়, সেগুলি নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর নানারকম কোর্স চালু হয়েছে। দরকার হলে আপনি সেই সমস্ত কোর্সগুলিতে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কী?

বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৫ বিলিয়নের ওপর মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। আপনার কি মনে হয় এই সংখ্যা দিনদিন হ্রাস পাবে নাকি বৃদ্ধি পাবে? অবশ্যই এই সংখ্যা খুব দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাবে। আর তার পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর পরিসর। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র ভারতেই ২০২৫ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৯৭৫ মিলিয়ন। এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে, কতটা বিপুল পরিমাণ জনগন ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত। ফেসবুক, ইউটিউব সর্বত্রই কোনো না কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন চলতেই থাকে। আর যেহেতু এই সমস্ত সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রাদুর্ভাবও ক্রমশ বেড়েই চলবে।

ইতিমধ্যে দোকানঘরগুলিতে মানুষের ভিড় অনেকটাই কম দেখা যাচ্ছে। এর একটাই কারণ মানুষ আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্যের কেনা-বেচাকে বেশি পছন্দ করছে। এরফলে তাদের সময়েরও সাশ্রয় হচ্ছে। যতদিন দিন যাচ্ছে মানুষের কাজের চাপও বাড়ছে। ক্লান্ত পা-গুলি অফিস থেকে ফিরে আবার দোকানের দিকে বাড়াতে যেন সদাই নারাজ। যার ফলস্বরূপ এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা সর্বদাই সাধারন মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে।

অন্যদিকে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য বেশ কিছু চাকরির ক্ষেত্রও তৈরী হয়েছে। ডিজিটালি দক্ষ মানুষজন এখন নিজেদেরকে খুব সহজেই মেলে ধরতে পারছেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবাদে। এটি নিঃসন্দেহে ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি দারুন ক্যারিয়ার হিসেবে পরিগনিত হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ যথেষ্ট উজ্জ্বল ও পোক্ত, যা অনেকটা পুরনো চালের মতো – যতই পুরনো হবে ততই বাড়বে।

উপসংহার

আপনি যদি অল্প সময়ের মধ্যে আপনার ব্যবসাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে চান, সেক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিকল্প হয়না। আশা করি, এই প্রতিবেদনটি ডিজিটাল মার্কেটিং সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে।

Exit mobile version