একুশ শতকে দাঁড়িয়েও তিলোত্তমা নগরী কলকাতায় ভৌতিক স্থানের (haunted places in Kolkata) অভাব নেই। বর্তমানে আধুনিকতার পরশ লাগা দক্ষিণ কলকাতা কিংবা ইস্ট্রান মেট্রোপলিটন কলকাতায় দাঁড়িয়ে পুরনো কলকাতার আমেজ অনুভব করা না গেলেও শিয়ালদা বা মানিকতলা চত্বরের পুরোনো দিনের ভগ্ন প্রায় বাড়িগুলো যেন আজও ‘তাদের’ উপস্থিতি জানান দেয়।
![কলকাতার সেরা ১০ টি ভৌতিক স্থান - Top 10 haunted places in Kolkata](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/01/kolkata-haunted-house-1024x512.jpg)
কলকাতার ভৌতিক স্থান (Haunted places in Kolkata)
পুরোনো শহরের কথা কখনও বললেই অন্যান্য শহরের সাথে সাথে কলকাতার নামটাও কিন্তু মাথায় আসে। কলকাতার সাথে জড়িয়ে আছে বহু বছরের ইতিহাস। এই ইতিহাস যেন বহু কিছুর সাক্ষী হয়ে রয়েছে, কলকাতার বুকে ছড়িয়ে আছে হাড় হিম করা ভৌতিক স্থানগুলি (Haunted places in Kolkata)। প্রত্যেকটি জায়গার সাথে জড়িয়ে আছে দুর্ধর্ষ গল্প। যারা রোমহর্ষক গল্প শুনতে ভালোবাসেন তাদের জন্য রইল কলকাতার ১০ টি জনপ্রিয় ভৌতিক স্থানের বিস্তারিত কাহিনী।
![সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রি - কলকাতা / South Park Street Cemetery - Kolkata](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/01/south-park-street-cemetery-kolkata-1024x512.jpg)
১. সাউথ পার্ক স্ট্রীট সিমেট্রি
কলকাতার এই স্ট্রীট সেমেট্রি বিখ্যাত ভৌতিক স্থান (haunted places in Kolkata) হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রবেশ করলে শরীরের মধ্যে এক আলাদা অনুভূতি অনুভব করা যায়। এই কবরস্থানে ব্রিটিশ বহু সৈন্যকে কবর দেওয়া হয়েছিল। এখনো তাদের উপস্থিতির কথা টের পাওয়া যায়। কোনদিনও কারোর কোনো ক্ষতির কথা শোনা যায়নি এখানে। একদিন একটি দুর্ঘটনা বা অলৌকিক ঘটনা ঘটে যায় এই কবরস্থানে। একদিন এখানে কিছু ছেলে মেয়ে এসেছিল ছবি তোলার জন্য। সেই ছবির মধ্যে একটি ছায়ামূর্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।পরে যে ছেলেটি ছবি তুলেছিল তার শ্বাসকষ্ট জনিতভাবে মৃত্যু হয়েছে। শোনা গেছে তার নাকি কোন রকম শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল না।
![ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগার - কলকাতা / The National Library of India - Kolkata](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/01/the-national-library-kolkata-1024x512.jpg)
২. দ্য ন্যাশনাল লাইব্রেরী
দ্য ন্যাশনাল লাইব্রেরী তৈরি হয় ১৮৩৬ সালে। বিভিন্ন রকম বইয়ের সম্ভারের সাথে সাথে পেয়ে যাবেন ভৌতিক স্থানের (haunted places in Kolkata) অভিজ্ঞতা। এখানের নিরাপত্তা রক্ষীদের বক্তব্য, প্রায়ই নাকি তারা এক মহিলার গলার আওয়াজ শুনতে পান। অনুমান করা হচ্ছে তিনি লর্ড মেটকাফের স্ত্রী যিনি এখনো এখানে ঘুরে বেড়ান। শোনা গেছে, তিনি খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মহিলা ছিলেন। তাই এখনো যদি কেউ লাইব্রেরীর বই পড়ে সঠিক জায়গায় না রাখে তার উপস্থিতি অনুভব করা যায়। পরবর্তীকালে ২০১০ সালে যখন এই লাইব্রেরী নতুন করে সংস্কার করা হয় তখন দশজন খুব মর্মান্তিকভাবে মারা গিয়েছিল। কেউ কেউ অনুভব করেছেন তাদের আত্মার উপস্থিতি।
![রাইটার্স বিল্ডিং - কলকাতা / Writers' Building - Kolkata](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/01/writers-building-kolkata-1024x512.jpg)
৩. রাইটার্স বিল্ডিং
রাইটার্স বিল্ডিং ও হন্টেড প্লেস এর তালিকায় জনপ্রিয়। ১৭৭৭ সালে ব্রিটিশ আমলে এই রাইটার্স বিল্ডিংটি স্থাপনা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে এটি লেখকদের দপ্তর হিসেবে পরিচিত ছিল। বিপ্লবী সংগ্রামী বিনয় বাদল ও দীনেশ তৎকালীন ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ কর্নেল সিম্পসনকে এখানে গুলিবিদ্ধ করেন। বিভিন্ন অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী এই রাইটার্স বিল্ডিংটি। কখনো বা পায়ের শব্দ, হাসির শব্দ ও অদ্ভুত শব্দ এর আভাস পাওয়া যায় এই রাইটার্স বিল্ডিং থেকে। অন্ধকার নেমে এলে রাইটার্স বিল্ডিং এর কর্মীরা এখানে থাকতে চান না। কর্নেল সিংহাম কে যে স্থানে হত্যা করা হয়েছিল সেটি এখন পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে আছে।
![রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন - কলকাতা / Rabindra Sarobar Metro Station - Kolkata](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/01/rabindra-sarobar-metro-station-kolkata-1024x512.jpg)
৪. রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন
নামটি শুনে হয়তো ভাবছেন মেট্রো স্টেশনে আবার ভূত আসবে কোথা থেকে? স্টেশন থেকে অনেকবারই হয়তো বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু কারোর সাহস হয় না একেবারে শেষ মেট্রোটিতে করে রাত্রিবেলা বাড়ি ফেরার। যারা শেষ মেট্রো করে এই স্টেশন থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই ভূতের দর্শন পেয়েছেন। ছায়া মূর্তির সাথে সাথে প্রায় নানারকম চিৎকারের শব্দ শোনা যায়। এই মেট্রো স্টেশনে বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছেন, তাই এখনো তাদের অশরীরী আত্মার উপস্থিতি অনুভব করা যায়। যদি ভূত দর্শনে আগ্রহী থাকেন তাহলে শেষ মেট্রোটির যাত্রী হয়ে দেখতে পারেন।
৫. হেস্টিংস হাউস
বাংলার প্রথম গভর্নর ওয়ারেন্ট হেস্টিংস এর নাম সবারই জানা। ইতিহাসের পাতা উল্টালে তার নাম লক্ষ্য করা যায়। তিনি এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন তার নিজস্ব বসবাসের জন্য। বর্তমানে এটি একটি সুপরিচিত মহিলা কলেজ। কলেজের ছাত্রীরা তাই নাকি একজন ঘোড়সওয়ার লোককে দেখতে পায়। তাকে দেখে মনে হয় তিনি যেন কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ওয়ারেন হেস্টিংস এর শেষ জীবন নাকি খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে কেটেছিল। তাই আজও তিনি হেস্টিংস হাউসে ফিরে আসেন আত্মার শান্তির জন্য। অনেকেই বলেছেন যে, যখন কলেজটি রাত্রিবেলা সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে প্রায়ই কোন ছোট বাচ্চার খিলখিল হাসির আওয়াজ ও ফুটবলের আওয়াজ পাওয়া যায়।
![উইপ্রো অফিস - কলকাতা / Wipro Office - Kolkata](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/01/wipro-office-kolkata-1024x512.jpg)
৬. উইপ্রো অফিস
ভারতের বিভিন্ন অফিসের মধ্যে কলকাতার উইপ্রো অফিসটি হল এমন একটি অফিস যেখানে একটি বিশেষ স্থানে কর্মচারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। উইপ্রো অফিসের টাওয়ার থ্রির তৃতীয় তলাতে যাবার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মনে করা হয়েছে যে জায়গাটিতে এই অফিস সেখানে একটি কবরস্থান ছিল এবং এখানে বহু ধর্ষণ ও খুন হয়েছে। কোম্পানির কর্মচারীরা এখানে প্রায় অসুস্থ আত্মার উপস্থিতি অনুভব করেছেন। দরজা বন্ধ ও খোলার আওয়াজ পাওয়া যায়,এছাড়া অফিসের ওয়াসরুমে অশরীরী আত্মার উপস্থিতি অনুভব করা গেছে প্রায়ই। হয়তো কিছু বলার জন্যই তারা প্রায় প্রায় তাদের উপস্থিতির কথা মানুষকে জানান দেয়।
৭. পুতুলবাড়ি
হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত এই পুতুলবাড়ি হল আরেকটি ভৌতিক স্থান (haunted places in Kolkata) কলকাতার মধ্যে।রাত্রিবেলা অন্ধকারে যদি এই বাড়িটির উপরে নজর পড়ে সত্যিই শিরদাঁড়া দিয়ে যেন ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। এখন পুতুলবাড়ি পরিত্যক্ত গুদামের মত দেখতে। কোন একসময় এই বাড়িটি ছিল ধনী বাবুদের বিলাসিতা জায়গা। নানা ধরনের পুতুলের সম্ভারের সাথে সাথে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনী। বহু নারীর উপর এই বাড়িতে হতো শারীরিক অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন। আর প্রতিবাদ করলেই কপালে জুটতো মার, এমনকি তাদের হত্যা পর্যন্ত করা হতো। রাতের অন্ধকারে যখন সেই নারীদের হাতের চুরি ও পায়ের নুপুরের আওয়াজ পাওয়া যায় বুঝে নিতে হবে সেটি হল তাদের প্রতিবাদের ভাষা।
![রয়েল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব - কলকাতা / Royal Calcutta Turf Club - Kolkata](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/01/royal-calcutta-turf-club-kolkata-1024x512.jpg)
৮. রয়েল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব
জর্জ উইলিয়াম নামক এক ব্যক্তি ৩০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ঘোড়ায় টাকা লাগাতেন এবং তার প্রিয় করা পার্ল তাকে প্রায়ই সেই রেসে জিতিয়ে দিত। তাই জন্য পার্ল “দ্যা কুইন অফ দ্যা ট্রাক্স” নামে পরিচিত ছিল। উইলিয়ামের সেই পার্ল অ্যানুয়াল ক্যালকাটা ডার্বিতে শেষবারের মতো অংশগ্রহণ নিয়েছিল এবং বার্ধক্য জনিত বা শারীরিক কারণবশত সেই প্রতিযোগিতায় সে বিজয়ী হতে পারেনি। ফলে উইলিয়ামের প্রচুর টাকা-পয়সা নষ্ট হয়েছিল। পরের দিন পার্ল এর মরদেহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রেললাইনের ট্র্যাক থেকে উদ্ধার করা হয়।
অতীতে বার্ধক্য জনিত কারণে অসুস্থ ঘোড়াকে কষ্টের হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য গুলিবিদ্ধ করার রীতি ছিল। আজও অনেকে রাতের দিকে বিশেষ করে শনিবারে টার্ফ এর ট্র্যাক এ একটি সাদা ঘোড়াকে ছুটে চলতে দেখে।
![হাওড়া ব্রিজ (কলকাতা থেকে দেখা) / Howrah Bridge (view from Kolkata)](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/01/howrah-bridge-kolkata-1024x512.jpg)
৯. হাওড়া ব্রিজ
হাওড়া ব্রিজ কলকাতা শহরের একটি জনপ্রিয় স্থাপত্য শিল্প। হাওড়া ব্রিজ দেখেই মানুষ কলকাতা শহরের প্রেমে পড়ে যায়। ১৯৪৩ সালের অপূর্ব সুন্দর ব্রীজটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এই সুন্দর এর পাশাপাশি লেগে গেছে হন্টেড প্লেস এর তকমাটিও। এই ব্রিজের উপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত গাড়ি, ট্যাক্সি ও বাস চলে। অনেক মানুষ এই ব্রিজের উপর থেকে ঝাপ দিয়ে নিজের জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন।কিন্তু মুক্তি তাদের হয়নি।
এখনো ভোর বেলা হুগলী নদীর ঘাটে যেসব কুস্তিগিররা অনুশীলন করতে আসেন তারা প্রায়ই নদীতে কারো সাহায্যের হাত দেখতে পান। আর যারা সাহায্য করবার জন্য এগিয়ে গেছেন তাদের মরদেহ পরে খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে এই নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক রয়েছে। অনেক আবার বলেন সাদা শাড়ি পরিহিত একটি মহিলাকে ব্রীজের উপর দিয়ে হেটে যেতে দেখা গেছে। অদ্ভুত স্বর করে ডাকতেও শোনা গেছে তাকে।
![খিদিরপুর ডক - কলকাতা / Khidirpur dock - Kolkata](https://bengalinews365.com/wp-content/uploads/2023/01/khidirpur-dock-kolkata-1024x512.jpg)
১০. কলকাতা ডক
কলকাতা ডক বা খিদিরপুর ডকটি নির্মাণ করেছিলেন নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ। দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে ব্যবসা করার সময় ব্রিটিশরা তাকে ফেলে দিয়েছিল। বর্তমানে এই জায়গাটিতে কলকাতার জনপ্রিয় কিছু ক্যাফে রয়েছে। এই জায়গাটি নিয়ে অনেক ভীতিকর গল্প আছে। শোনা যায় ব্যবসায়ী এবং নাবিকরা এই ডক এলাকায় মাঝে মাঝেই নবাবের ছায়া মূর্তি ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। গুজব আছে যে, নবাব তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ব্রিটিশদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার নিতে এখনও ঘুরে বেড়ান। তবে এখন সেখানে না ব্রিটিশ আছে, না নবাব আছে। শুধু সাধারণ মানুষকে রক্ত ঠাণ্ডা করার জন্য শুধু ডকের কর্মীরাই আছেন!
তবে আলোর রোশনাই ও উঁচু উঁচু বিল্ডিং এর ভিড়ে তাদের অস্তিত্ব হয়তো আজ সংকটে। তবুও তারা মাঝে মাঝে তাদের উপস্থিতি জানান দিয়ে যায় এই প্রাণের শহর কলকাতার বুকে। বিজ্ঞান আত্মাকে না মানলেও এর অস্তিত্বকে একেবারে অস্বীকার করতে পারেনি। শক্তি কিন্তু অবিনশ্বর। শক্তিকে ধ্বংস বা সৃষ্টি করা যায় না। তাহলে মানুষের মৃত্যুর পরে তার আত্মা কোথায় যায়? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আজও কেউ দিতে পারেননি।
কলকাতার সেরা ১০ টি ভৌতিক স্থানের (top 10 haunted places in Kolkata) মধ্যে কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান সম্বন্ধে পড়তে দেখুন ->
- সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রি : https://en.wikipedia.org/wiki/South_Park_Street_Cemetery
- ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগার / দ্য ন্যাশনাল লাইব্রেরী : https://www.nationallibrary.gov.in/home/history
- রাইটার্স বিল্ডিং : https://en.wikipedia.org/wiki/Writers%27_Building
- রয়েল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব : https://en.wikipedia.org/wiki/Royal_Calcutta_Turf_Club
- হাওড়া ব্রিজ : https://en.wikipedia.org/wiki/Howrah_Bridge
এই রকম আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।
porro ratione eius qui molestiae ipsam veniam eligendi dolores officiis ipsa neque laudantium consectetur consectetur numquam exercitationem quae asperiores. in veritatis non qui consequatur minima delectus sit omnis beatae cumque. minima sunt esse culpa sed ipsam impedit aut asperiores quia ipsam voluptas voluptatum deleniti.
Your comment is awaiting moderation.