সবে তখন সন্ধ্যে নেমেছে পশ্চিম আকাশে। শীত কাতুরে বাঙালি গরম পোশাক গায়ে চাপতে ব্যস্ত। এমন সময় আকাশের দক্ষিণ কোণ বরাবর এক অদ্ভুত রহস্যময় আলোর রশ্মি বিকিরিত হতে দেখা গেল। অতি উৎসাহীদের মধ্যে কেউ কেউ তার ফটো তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা শুরু করলেন। সাধারণভাবেই এই আলোকে ঘিরে ঘনাতে শুরু করে নানা রহস্য। পরবর্তীতে জানা যায় রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকেই বহু মানুষ এই রহস্যময় আলো নিয়ে পোস্ট করছেন তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়।
আকাশে রহস্যময় আলোর উৎস
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৫ টা ৫০ মিনিট থেকে ৬ টার মধ্যে আকাশে টর্চের মত জ্বলতে দেখা যায় এই আলোক রশ্মিকে। কোথাও কোথাও এক দুই মিনিটেরও বেশি স্থায়ী হয় আলোটি। স্বভাবতই, এই রহস্যময় আলোকে ঘিরে বিস্ময় ছড়ানোর সাথে সাথে নানা রকম গুজব ছড়াতে শুরু করে। যে যার মত করে ব্যাখ্যা দিতে থাকে এই আলোর উৎস সম্পর্কে। কেউ কেউ বলেন এটি হয়তো কোন ড্রোন থেকে বিকিরিত আলো। তবে ড্রোন এত উপরে ওড়ানো হয়না যা সাত-আটটি জেলা থেকে একসাথে দেখা যাবে।
উৎস সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত
কেউ কেউ বলতে থাকেন এই রহস্যময় আলোটির উৎস আসলে কোনো ধুমকেতু। তবে ধূমকেতু হলে তার আগাম সংবাদ জ্যোতির্বিদদের তরফ থেকে জানানো হত। এই আলোর উৎসটিকে মোটামুটি ভাবে বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, নদীয়া সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকেও দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে আলোর উৎসটি একেবারে চোখ ঝলসে দেওয়ার মত না হলেও বেশ স্পষ্ট ভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী এই আলোর উৎস নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
যে কারণ গুলি সামনে এসেছে
তিনি বলেন এই ধরনের রহস্যময় আলোর মূলত তিনটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত “এটি উল্কা বৃষ্টির কারণে হতে পারে। তবে উল্কা বৃষ্টি সাধারণত সন্ধ্যার দিকে দেখা যায় না, এটি দেখা যায় রাত বারোটা নাগাদ।” তিনি দ্বিতীয় যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা হলো, ”এটা রকেটের কোনও অংশ হতে পারে।” তিনি বলেন, আলোর গতিপথ দেখে মনে হয়েছে সেটি বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে গিয়েছে। তাই তিনি বলেন, ”দেখে মনে হচ্ছে, কোনও রকেটের জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছে। তার ছোট অংশ পৃথিবীর দিকে আসছে। সেই অংশটি আকারে ছোট বলেই তার আলো তত উজ্জ্বল।”
আলোক উৎসের মূল কারণ
তৃতীয় আরো একটি সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন সন্দীপ বাবু। তাঁর মতে, ”কোনও জায়গা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হয়ে থাকতে পারে। তারও আলো হতে পারে এটা।” তবে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে সন্দীপবাবুর দেওয়া তৃতীয় সম্ভাবনাটিই আসলে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে এই রহস্যময় আলোর প্রকৃত উৎস হিসেবে। আজ বৃহস্পতিবার ওড়িশার হুইলার্স আইল্যান্ড থেকে অগ্নি ৫ মিসাইলের উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এই নিউক্লিয়ার অস্ত্র বহন সক্ষম ব্যালিস্টিক মিসাইলের সর্বোচ্চ পাল্লা ৫০০০ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এটিকে ছোড়া হয়েছে। আর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে সন্ধ্যার পরে সেই অগ্নি ৫ এর আলোর রশ্মি দেখা দিয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ব্যাখ্যা
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে বলা হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অগ্নি ৫ ব্যালিস্টিক মিসাইলের এর নাইট ট্রায়াল চালানো হয়েছে। সেটি সফলভাবে শেষও হয়েছে। অন্ধকারেও অগ্নি ৫ সঠিকভাবে শত্রুপক্ষের উপর আঘাত হানতে পারে কিনা সেটা দেখার জন্যই এই উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। অগ্নি ৫, ১৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের যুদ্ধাস্ত্র বহনে সক্ষম। উৎক্ষেপণের পর এটি র সর্বোচ্চ গতি ২৪ ম্যাক অর্থাৎ এটি শব্দের ২৪ গুন গতিতে ছুটতে পারে।
অগ্নি ৫ / Agni V মিসাইল সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন -> https://en.wikipedia.org/wiki/Agni-V
এই রকম আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।