ইংল্যান্ডের বাঙালি ডাক্তার মৃত ব্যাক্তিকে ৪৫ মিনিট পর বাঁচিয়ে তুললেন

ইংল্যান্ডের বাঙালি ডাক্তার মৃত ব্যাক্তিকে ৪৫ মিনিট পর বাঁচিয়ে তুললেন

শরীর নিথর হয়ে পড়েছিল ৪৫ মিনিট ধরে, হার্ট বিট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অর্ধমৃত শরীরের শিরা-ধমনীতে  রক্ত চলাচল ও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রোগী যে মৃত, তা চিকিৎসকেরাও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর বাঙালি ডাক্তার অরিজিৎ ঘোষ এর চেষ্টায় হঠাৎ এই মৃত শরীরে জেগে উঠল নতুন প্রাণ। হৃদপিণ্ড আবার ধুকপুক করে উঠলো এবং শিরা ধমনী দিয়ে বয়ে চলল রক্তের স্রোত।

কোথায় ঘটলো এই ঘটনা?

ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম সিটি হাসপাতালে চিকিৎসকরা একপ্রকার নজির স্থাপন করেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ যেন এক অলৌকিক ঘটনা, তাও আবার এক ভারতীয়, তথা বাঙালি ডাক্তারের নেতৃত্বে। বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃদপিন্ডে যেন আবার নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। সর্বজিত সিং, বয়স ৪২ বছর, করোনার পরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল তার। এর আগেও তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ইতিহাস রয়েছে সর্বজিতের।

বন্ধ হার্ট-বিট আবার সচল

এবারের অ্যাটাকের পর সর্বজিতের হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেছিল, এমনকি শিরা ধমনীতে রক্ত চলাচল প্রায় স্তব্ধ। ডাক্তাররা আপ্রাণ চেষ্টা করেও মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারলেন না। রোগীর নাড়ি ধরেও যখন কোন স্পন্দন খুঁজে পেলেন না তাকে মৃত বলে ঘোষণা করলেন নার্সিংহোমের ডাক্তাররা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্লিনিকাল ডেথ ঘটে গেলেও ডাক্তাররা হাল ছাড়েনি। বাঙালি ডাক্তার (কার্ডিওলজিষ্ট/Cardiologist) অরিজিৎ ঘোষ এর তত্বাবধানে ঘটে গেল এক মিরাকেল।

বাঙালি ডাক্তার অরিজিৎ ঘোষ এর তত্বাবধানে বার্মিংহাম সিটি হাসপাতালে ঘটে গেল এক আশ্চর্য ঘটনা
ইংল্যান্ডের বাঙালি ডাক্তার অরিজিৎ ঘোষ এর তত্বাবধানে বার্মিংহাম সিটি হাসপাতালে ঘটে গেল এক আশ্চর্য ঘটনা। প্রাণ ফিরে পেলেন সর্বজিত সিং।

কিভাবে হলো সর্বজিতের এই অবস্থা?

মানুষের হৃদপিণ্ড সবসময় চলে নিজের ছন্দে, একজন সুস্থ মানুষের হৃদপিণ্ড এক মিনিটে ৬০ থেকে ৮০ বার পাম্প করে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত হৃদপিন্ডে পৌঁছে দেয়। মানুষের নিজস্ব হৃদপিণ্ড নিজের ছন্দে ২৪ ঘন্টায় কাজ করে চলেছে। কোন কারনে যদি এই ছন্দপতন ঘটে, তাহলেই মানুষের হৃদস্পন্দন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে।এই রোগ হলে হার্টের ব্লাড জমাট হয়ে যেতে পারে। এমনকি হাত ও পায়ের শিরা ব্লক হয়ে যেতে পারে। রোগী হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়ে যায়। সর্বজিতের ক্ষেত্র এই ঘটনা ঘটেছিল, ৪৫ মিনিট স্তব্ধ হয়েছিল তার হৃদস্পন্দন।

কিভাবে ঘটে মিরাকেল?

সর্বজিতের ক্ষেত্রে বার্মিংহাম সিটি হাসপাতালের ডাক্তাররা, বিশেষতঃ চিকিৎসক অরিজিৎ ঘোষ এর চেষ্টায় ডেফিব্রিলেটর যন্ত্রের সাহায্যে তার হৃদস্পন্দনের গতি আবার ফিরিয়ে আনে। অর্ধমৃত মস্তিষ্কে আবার অক্সিজেন পৌঁছতে শুরু করে। মূলত এই যন্ত্রের মাধ্যমে ইলেকট্রিক শক দিয়ে হৃদস্পন্দনকে আবার আগের গতিতে ফিরিয়ে আনা হয়। শিরা ধমনীতে রক্ত প্রবাহ শুরু হয়ে যায় আগের মত। এই পদ্ধতিটি আসলে CPR এর মতো কাজ করে। হার্ট এ পাম্পের মাধ্যমে স্পন্দন ফিরিয়ে আনে এই ডিভাইসটি।

মারা যাওয়ার পর কেমন অনুভব করেছিলেন সর্বজিত?

টানা ৪৫ মিনিট তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ এক ঘোরের মধ্যে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে এমনটাই জানিয়েছেন সর্বজিৎ। মৃত্যুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তার সন্তানের মুখ ভেসে উঠছিল বারবার। তিনি শুধু ভেবেছিলেন এক সন্তান তার বাবাকে হারিয়ে ফেলল। কিন্তু হঠাৎই আলোর সঞ্চার হতে থাকে, এমনকি হাতে পায়েও স্পন্দন অনুভব করেন তিনি। ক্রমশই লোকজনের আওয়াজ তার কানে ভেসে উঠছিল। অসার শরীরে ক্রমশ প্রাণের সঞ্চার অনুভব করেন তিনি। শেষমেষ ইংল্যান্ডের বাঙালি ডাক্তার অরিজিৎ ঘোষ এর নেতৃত্বে বার্মিংহাম সিটি হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রচেষ্ঠায় এক গভীর অন্ধকার থেকে নতুন এক জীবনে ফিরে আসেন সর্বজিৎ সিং।

অতিতেও ভারতীয় চিকিৎসা দুনিয়ায় সারা ফেলে দেওয়া অনেক কাজ করেছেন বাঙালি ডাক্তারেরা। তবে বিলেতের মাটিতে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে একটি মাইলস্টোন।


সুত্র: BBC

এই ধরনের আরো খবর পেতে অবশ্যই চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *