Smartphone Addiction in Children: আপনার শিশুটির হাতে ‘স্মার্টফোন’ তুলে দেওয়া কাল হচ্ছে না তো?

Smartphone Addiction in Children: আপনার শিশুটির হাতে ‘স্মার্টফোন’ তুলে দেওয়া কাল হচ্ছে না তো?

‘স্মার্টফোন’ এর ব্যবহার যদি সঠিকভাবে হয় তবে একটি আশীর্বাদ, আর যদি ব্যবহার হয় ভুল বা স্মার্টফোনে আসক্তি (Smartphone addiction) হয়, তবে তা হয়ে উঠতে পারে ধ্বংসাত্মক। আর যদি স্মার্টফোনটা উঠে যায় বাচ্চাদের হাঁতে তবে এর অপব্যবহার প্রায় সুনিশ্চিত বলাই চলে।

শিশুরা যে কোনো প্রাপ্তবয়স্কের চেয়ে অনেক বেশি পারদর্শী স্মার্টফোন ব্যবহারে। তার কিছুটা কৃতিত্ব যায় কিন্তু বড়দেরই কারন শিশুদের বায়না সামলাতে বা তাকে এক জায়গায় বসিয়ে রাখতে তারা শিশুদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন নিজের ‘স্মার্টফোন’। আর তা ঘাঁটতে ঘাঁটতেই শিশু শিখে ফেলছে মোবাইলের খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয়। অনেক অভিভাবক কে গর্বের সাথে বলতে শোনা যায় ‘আমার ছেলেমেয়েরা স্মার্টফোনের সব জানে।’ ব্যাস আর কি যেখানে আপনার উচিত ছিল আপনার বাচ্চার বদঅভ্যাস থেকে তাকে বিরত রাখা উল্টে আপনি তাদের আগ্রহ আরো দ্বিগুন করে দিলেন। এর করেই শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্তি (Smartphone addiction in children) দেখা দেয়।

শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি - Smartphone addiction in children
শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি – Smartphone addiction in children

আপনি কি জানেন স্মার্টফোনে আসক্তি (Smartphone addiction) কিভাবে ক্ষতি করে চলেছে আপনার সন্তানের?

টিউমার

শিশুদের উপর ‘স্মার্টফোন’টির বিকিরণ কিকি প্রভাব ফেলছে সে বিষয়ে জানার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাপক গবেষণা চলছে। যেহেতু শিশুদের বয়স তাদের দেহ পরিবর্তন এবং বর্ধনের বিশেষ সময়, এই সময় মোবাইলে রেডিয়েশনের প্রভাবগুলি প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে তাদের উপর পৃথক এবং বেশি মাত্রায় হয়।

যে সব শিশুদের দীর্ঘ সময়ের জন্য ফোন ব্যবহার করার প্রবণতা বা আসক্তি (Smartphone addiction) রয়েছে, তথা তাদের কানের কাছে ফোন রাখার কারণে, বিশেষত কান এবং মস্তিষ্কের অ্যান্টি–ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা গেছে।

ক্যান্সার

মস্তিস্কের মতো অন্যান্য অঙ্গ গুলি যেমন হাড়, টিস্যু এবং প্রতিরক্ষামূলক আবরণগুলি শিশুদের মধ্যে খুব পাতলা হওয়ার দরুন, এই অঙ্গগুলি মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ৬০% বিকিরণ শোষণ করে নেয়। বিকিরণটি শিশুদের শরীরে অদ্ভুত প্রভাব ফেলতে পারে, কখনও কখনও সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রকেও প্রভাবিত করে। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এটিকে একটি “সম্ভাব্য কার্সিনোজেন” হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে এবং যা ক্যান্সারের সম্ভাব্য ঝুঁকি বহন করে।

লেখায় সমস্যা

সম্প্রতি ইংল্যান্ডে ‘এনএইচএস ট্রাস্ট’ -এর কয়েকজন চিকিৎসকের করা একটি গবেষণায় উঠে এসেছে একটি ভয়ঙ্কর তথ্য যে অতিরিক্ত পরিমাণে স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিন ব্যবহার ভবিষ্যতে শিশুদের পেন বা পেনসিল ধরতেও সমস্যা হতে পারে। অক্ষম হয়ে যেতে পারে তাদের আঙুলও।

এছাড়াও, কলকাতার অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ ‘অমিতাভ নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের’ জানান, লেখা বিষয়টি কিন্তু হাতের কবজি ও আঙুলের এক জটিল যোগসাজশের ওপর নির্ভর করে। বাচ্চাদের ঠিক উপায়ে পেনসিল বা পেন ধরার জন্য আঙুল ও কবজির পেশিগুচ্ছের জোর দরকার হয়। এবং পেশির সঠিক সংকোচন-প্রসারণও প্রয়োজন। কিন্তু তা ক্রমশ কমে যাচ্ছে টাচস্ক্রিন ব্যবহারের ফলে। স্মার্টফোনে আসক্তির (Smartphone addiction) ফলে এই সমস্যা আরো বেড়ে চলেছে।

শিশুদের মধ্যে স্মার্টফোন আসক্তি স্পনডিলাইটিস এর কারণ হতে পারে - Smartphone addiction in children can cause spondylitis
শিশুদের মধ্যে স্মার্টফোন আসক্তি স্পনডিলাইটিস এর কারণ হতে পারে – Smartphone addiction in children can cause spondylitis

স্পনডিলাইটিস

স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় সভাবতই আমরা মাথা নিচু করে স্মার্টফোনের দিকে একভাবে তাকিয়ে থেকে স্ক্রিনটিকে টিপে যেতে থাকি। যার ফলে আমাদের ঘাড় এবং হাতের আঙ্গুল স্পনডিলাইটিসের শিকার হচ্ছে।

মস্তিষ্কের সমস্যা

স্মার্টফোনের সমস্ত ধরণের যোগাযোগের জন্য প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিন চৌম্বকীয় তরঙ্গগুলি কাজ করে। অন্যদিকে মস্তিষ্কের নিজস্ব বৈদ্যুতিক প্রবণতা রয়েছে যার মাধ্যমে নিউরাল নেটওয়ার্কে যোগাযোগ পরিচালিত হয়। শিশুদের মস্তিষ্কে ফোন থেকে তরঙ্গগুলি সহজেই অভ্যন্তরের অংশগুলিতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে কারণ তাদের মস্তিস্ক তখনো সম্পূর্ণরূপে গঠিত হয়ে ওঠে না।

কেবল মাত্র ২ মিনিটের জন্য ফোনে কথা বললে কোনও শিশুর মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ পরিবর্তন হয়ে যায়। এই ত্রুটিযুক্ত ক্রিয়াকলাপটি মেজাজের ধরণ এবং আচরণগত প্রবণতার পরিবর্তন ঘটায় এবং শিশুদের নতুন জিনিস শিখতে বা সঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করে।

পড়াশোনায় ব্যাঘাত

শিশুদের মধ্যে স্মার্টফোনে আসক্তির (Smartphone addiction in children) কারণে শিশুরা অনেক সময় তাদের সঙ্গে স্কুলে ফোন সাথে নিয়ে যায় এবং স্কুলের বিরতিতে বা ক্লাস চলাকালীনও বন্ধুদের সাথে চ্যাট করে বা গেম খেলে এবং এর ফলে ক্লাসে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়। এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্য বাদ পড়ে যায়। ফলস্বরূপ, পড়াশোনা এবং পরীক্ষার সময়ে গভীর সমস্যার সৃষ্টি হয়।

বিদ্যালয়ে অন্যায়

স্মার্টফোন গুলি দিয়ে শিশুদের মাধ্যমে অপব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে, যে শিশুরা স্কুলে অনুমোদিত নয় এমন পরীক্ষাগুলিতে ইনবিল্ট ক্যালকুলেটর ব্যবহার করছে, পরীক্ষায় প্রতারণার জন্য কপি বা রেফারেন্স তথ্য লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এমনকি পরীক্ষার সময় চুপিচুপি কথা বলার মাধ্যমে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে উত্তর বিনিময় করচ্ছে। এই জাতীয় আচরণ কেবল একাডেমিক কর্মক্ষমতাকেই প্রভাবিত করচ্ছে তা নয়, পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিত্বের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলছে।

অনুপযুক্ত মিডিয়া

অন্যান্য গ্যাজেটের মতো, মোবাইল ফোনকেও একটি ভুল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুরা তাদের বন্ধুদের গ্রুপের মধ্যে অনুচিত মেসেজ, ছবি বা অন্যান্য মিডিয়াগুলি দেখতে পায় এবং এটিকে অন্যের কাছে প্রেরণ করতে পারে। তারা তাদের উপলব্ধি এবং চিন্তাভাবনাকে ভুল দিকে পরিচালিত করে অল্প বয়সেই পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। এমনকি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তাদের ভুল নিজস্বী বিনিময়ের দ্বারা তাঁরা কলঙ্কের কারণ হতে পারে যা তাদের জীবনকে দীর্ঘকাল প্রভাবিত করবে।

ঘুমে ব্যাঘাত

আজকাল শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্তির (Smartphone addiction in children) কারণে অনেক ক্ষেত্রেই অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে বন্ধুদের সাথে অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলা, গেম খেলা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রোল করতে থাকা, যা সময়তো নষ্ট করছেই সাথে সাথে ক্লান্তি এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। কম ঘুমও শিক্ষা জীবনকে ব্যহত করে, কারন শিশুরা স্কুলে যা পড়ে তাতে মনোনিবেশ করতে খুব বেশি ঘুমের প্রয়োজন। তা ছাড়া রাত্রে কম ঘুম শরীরের নানারকম ব্যাধিরও সৃষ্টি করে। অতএব, এটির খারাপ প্রভাব যা তাদের জীবনের সমস্ত স্তরে প্রবেশ করে।

মেডিকেল ইস্যু

অবসর সময় খেলাধুলা না করে শিশুদের মোবাইল ফোনে আসক্তির (Smartphone addiction in children) ফলে তাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ব্যাহত হয় এবং তারা প্রকৃতির তাজা বাতাস থেকে বঞ্চিত থাকে। এটি তাদের স্থূলত্ব বা ওজন বেড়ে যাওয়া এবং অন্যান্য অসুস্থতার ঝুঁকির মধ্যে ফেলে, যা পরে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো ক্ষতিকারক রোগে পরিণত হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য

সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশুরা সাইবারবুলির সংস্পর্শে আসতে পারে। সাইবারবুলিরা ইন্টারনেটে শিশুদের হ্যারাস করে এবং তাদেরকে হুমকি দেয়। অনেক শিশুরা এর প্রকোপে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শিশুদের মধ্যে থেকে স্মার্টফোন আসক্তি কিভাবে দূর করবেন? - How to get rid of smartphone addiction in children?
শিশুদের মধ্যে থেকে স্মার্টফোন আসক্তি কিভাবে দূর করবেন? – How to get rid of smartphone addiction in children?

কিভাবে বাঁচাবেন আপনার শিশুকে স্মার্টফোনে আসক্তির হাত থেকে? / How to get rid of smartphone addiction in children

  • ১৬ বছরের কম বয়সের শিশুদের সেল ফোন দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • আপনার শিশু যখন ফোনে কথা বলে তখন ফোনটি কানের কাছে ধরার পরিবর্তে লাউড স্পিকার ব্যবহার করুন।
  • যেখানে আপনার মোবাইলের সংকেতের শক্তি দুর্বল সেখানে আপনার শিশুকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেবেন না। কারন, এ ক্ষেত্রে একটি ভাল সংকেত শক্তি পেতে তাদের নিজস্ব বিকিরণকে প্রশস্ত করে তোলে যা শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে।
  • বাবা,মা বাড়ির অন্যান্য অভিবাবকরা যখন শিশুদের আশেপাশে থাকেন তখনই কেবলমাত্র তাদের ফোন ব্যবহার করতে দেবেন। এটি শিশুদের আচরণের ধরণ তৈরি করতেও গুরুত্বপূর্ণ।
  • ঘুমাতে যাওয়ার সময় মোবাইলকে শিশুদের মাথার কাছে রাখবেন না।
  • একেবারে ছোট্ট শিশুদের কান্না থামানোর জন্যে তাদের হাতে মোবাইল তুলে দেবেননা।
  • বাড়তি সময় তাদের বাইরে খেলতে পাঠান।
  • ছুটিতে থাকাকালীন দুজনে মিলে তাকে নিয়ে ঘরে বসে কোনো সৃজনশীল কাজ করুন।
  • পাঠ্য পুস্তক বাদে অন্যান্য পুস্তক ও তাদের হাতে তুলে দিন। একসাথে বইটি পড়ুন।

শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্তি (Smartphone addiction in children) ও তার প্রভাব সম্পর্কে পড়ুন -> www.researchgate.net/….Smart_Phone_Addiction_among_Early_Childhood

এই রকম আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *