ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সি-তে বিনিয়োগ কতটা ঝুঁকি সাপেক্ষ? আইনকে কি পাশে পাবে বিনিয়োগকারীরা?

ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সি-তে বিনিয়োগ কতটা ঝুঁকি সাপেক্ষ? আইনকে কি পাশে পাবে বিনিয়োগকারীরা?

“বল বল বল সবে/ শত বীণা বেনু রবে
ভারত আবার জগত সভায়/ শ্রেষ্ঠ আসন লবে”

উক্ত দুটি লাইনের অর্থ একেবারে যথার্থ হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে। এক সমীক্ষার দ্বারা জানা গেছে যে, ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়াতে বিনিয়োগের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ স্থান লাভ করেছে ভারতবর্ষ। ভারতের প্রায় ১০ কোটি মানুষ ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করেছেন। এই সংখ্যার তুলনায় ইউএসএ তে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তুচ্ছ মনে হবে। তার কারণ ইউএসএ তে মাত্র ১.৩ কোটি মানুষ ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করেছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি

এবার প্রশ্ন হল ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ ভারতবর্ষে আইনসম্মত নাকি আইন বিরুদ্ধ? যদি তা আইন বিরুদ্ধ হয়, তবে সেকেন্ডের মধ্যে ঘুম উড়ে যাবে এই ১০ কোটি বিনিয়োগকারীর। আর প্রশ্নের উত্তর যদি ইতিবাচক হয়, তবে এই ১০ কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখবে আরো এগিয়ে যাওয়ার। সঠিক উত্তরটি জানতে হলে প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। এছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং কিভাবে ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর দ্বারা এই কারেন্সি পরিচালনা করা হয়, তার সমস্ত তথ্য এই ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে।

অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, এটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল কারেন্সি এবং বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব এখনো পর্যন্ত উপলব্ধি করা যায়নি। এছাড়া এর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণরূপে প্রাইভেট সংস্থাগুলির উপর। আরো শোনা গিয়েছিল যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি এন্ড রেগুলেশন অফ অফিশিয়াল ডিজিটাল কারেন্সি বিল ২০২১ দ্বারা ক্রিপ্টোকারেন্সের উপর এক নতুন নিয়মানুবর্তিতা প্রযোজ্য হবে। কিন্তু আর.বি.আই. থেকে শুরু করে রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার কেউই এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন প্রকার আলোকপাত করেনি।

তবে কি ভারতবর্ষে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ?

২০২১ থেকে ২০২২ সালে এসেও ভারতে ক্রিপ্টো কয়েনের ওপর কোন আইনি নিষেধাজ্ঞা আনা হয়নি। সেই মতে ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ ভারতবর্ষে এখনো পরোক্ষভাবে আইন সম্মত। অপরদিকে সরকারের তরফ থেকে কোন নিয়ন্ত্রণ বা আইন এই ব্যাপারে লাগু হয়নি। যার ফলে সন্দেহ থেকেই যায় যে, ভবিষ্যতে এটি আইন বিরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা! তবে যেহেতু এখনো পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটির মত মানুষ ক্রিপ্টোতে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করে বসে আছে এবং শুধুমাত্র মানুষই নয় তাদের সাথে সাথে বেশ কিছু নামজাদা কোম্পানিও বিনিয়োগ করেছে, তাই হয়তো সরকার এতটা কঠোর হৃদয় হবে না।

কোন দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি পুরোপুরি আইন সম্পন্ন?

এখনো পর্যন্ত এল.সালভাডোর নামক দেশটিতে সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সিকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। এদেশে বিনিয়োগ বা ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন সম্পূর্ণরূপে আইনসম্মত।

এর কারণ কি?

ক্রিপ্টোকারেন্সির আসার পর পরই এই দেশের সরকার এটিকে আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে। এমনকি, এই দেশের মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে নির্দ্বিধায় কোন জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করতে সক্ষম হয়। এর প্রধান কারণ হলো ইকোনমিক রেমিটেন্স। অর্থাৎ এই দেশের বাইরে থেকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করা হয় দেশের ভেতরে। যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এই সুবিধাকে আরো পোক্ত করার জন্য এই দেশের প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন যে বাইরে থেকে আসা কোন ব্যক্তিও এই কয়েনের মাধ্যমে লেনদেন বা বিনিয়োগ করতে পারবেন। যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

কোন দেশগুলিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি আধা আইনসম্পন্ন?

হ্যাঁ, পৃথিবীতে এমন কয়েকটি দেশ রয়েছে, যাদের সরকার পুরোপুরিভাবে আইনি আওতায় আনতে পারেনি ক্রিপ্টোকারেন্সিকে। বেশ কিছু জায়গায় ছাড় প্রদান করেছে। যেমন ইউএসএ; এখানে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টেন্ডার করা সম্ভব হবেনা। কিন্তু কোন ব্যক্তি ক্রিপ্টোকে নিজের সম্পদ হিসেবে গচ্ছিত রাখতে পারবেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সি পুরোপুরি নিষিদ্ধ এমন কোন দেশ আছে কি?

অবশ্যই কিছু দেশে রয়েছে যেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পূর্ণরূপে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ। এই সমস্ত দেশগুলি হল বাংলাদেশ, চীন, ইরাক, কাতার, মিশর, মরক্কো ইত্যাদি।

এই কারেন্সি ব্যবহারে ভারতে সত্যি কি কোন ক্ষতি হতে পারে?

এখনো পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সির আশীর্বাদ বা অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক চলতে পারে। ২০১৮ সালে হঠাৎই আর.বি.আই-এর ঘোষণার অনুযায়ী, পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার শিকল পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কারেন্সিগুলিতে। তবে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হওয়ার পর ২০২০ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা আবার তুলেও নেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্রিপ্টো জগত হল দেশের অর্থনৈতিক যোগানের একটি অতীব শক্তিশালী কেন্দ্র। এতে মানুষসহ সরকারও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আর্থিক সুবিধা লাভ করতে পারে। যদিও এই কারেন্সির বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক বর্তমান। তবুও এই জগতটি পরবর্তীতে ভারতের অর্থনীতিকে ভীষনভাবে সহায়তা করতে সক্ষম হবে।

তবে দেশের সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ণের মাধ্যমে এর ক্ষতিকারক দিকগুলি যাচাই করে দেখা এবং তার উপর নিয়ন্ত্রণ আনা। এর থেকে আঁচ করা যেতে পারে যে, ভবিষ্যতে এই কারেন্সির উপর ভরসা করা যাবে। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ হয়তো বিফলে যাবে না।

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আরো জানতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *