Everest Green Boots: এভারেস্টের বিখ্যাত মৃতদেহ “গ্রীন বুট”এর বেদনাদায়ক কাহিনী

Everest Green Boots: এভারেস্টের বিখ্যাত মৃতদেহ “গ্রীন বুট”এর বেদনাদায়ক কাহিনী

এভারেস্ট এ ওঠার সময় তিব্বতের দিকে অথবা উত্তর দিকে প্রায় ৮৫০০ মিটার উঁচুতে রয়েছে চুনাপাথরের একটি ছোট গুহা। বরফের চাদরের উপর এক পর্বতারোহী গুহার ভিতরে বাম পাশ ফিরে, এভারেস্ট শৃঙ্গের দিকে মুখ করে শুয়ে আছেন। তাকে এভারেস্টের “গ্রীন বুট” বা “গ্রীন বুটস” (Everest Green Boots) বলা হয়। যাতে মুখ দেখা না যায়, জ্যাকেটের হুডটা টেনে নেওয়া এবং বাহু দুটি জড়ো করে বুকের কাছে নিয়ে আসা। কে এই পর্বতারোহী? কি তার পরিচয়? জেনে নিন এর বেদনাদায়ক কাহিনী।

সবার পরিচিত এভারেস্টের গ্রীন বুটস (Everest Green Boots)

বিশ্বের সবার কাছে এভারেস্টের এই মৃতদেহটি মাউন্ট এভারেস্টের “গ্রীন বুট” (Everest Green Boots) নামে পরিচিত। অনেক সত্য-অসত্য কাহিনী প্রচলিত আছে এই গ্রিন বুটস-এর ব্যাপারে। এই প্রতিবেদনে আমরা জেনে নেব এর পেছনে থাকা আসল ঘটনাগুলি। দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে তিনি এই গুহাতেই শুয়ে আছেন, এমনকি গুহাটির নামও হয়ে গেছে গ্রীন বুটস কেভ (Green Boots Cave)। পরনের লাল রংয়ের ক্লাইম্বিং জ্যাকেটের রং এখন অনেকটাই ফিকে, কালচে নীল ট্রাউজারের রঙ্ও মলিন হওয়ার পথে। তবে তার পায়ে জ্বলজ্বল করছে ফ্লুরোসেন্ট সবুজ রং এর বুটটি।

হঠাৎ গায়েব

২০১৪ সাল নাগাদ গ্রীন বুট কে তার গুহাতে কোথাও পাওয়া যায় না। ধরে নেওয়া হয় বরফ গলার সাথে সাথে তার মৃতদেহটি হয়তো কোথাও সরে গেছে কিংবা বরফে হয়তো চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু আবার গ্রিন বুটকে খুঁজে পাওয়া যায় ২০১৭ সালের সেই একই চুনাপাথরের গুহাতে। নেপালে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় ২০১৯ সালের ২৫ শি এপ্রিল তাতে এই মৃতদেহকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু ২০১৯ সালের শরৎকাল নাগাদ কোরিয়ার একদল পর্বতারোহী গ্রীন বুটকে তার গুহা থেকে দূরে দেখতে পায়।

এভারেস্টের গ্রীন বুটস / Everest Green Boots
এভারেস্টের গ্রীন বুটস / Everest Green Boots

কেমন ছিল সেই এভারেস্ট অভিযান?

অফুরন্ত সাহস ও উদ্যম নিয়ে শুরু হয়েছিল এই মাউন্ট এভারেস্ট (Mount Everest) অভিযান। যে চারজন সদস্য এভারেস্ট অভিযান শুরু করেছিল তারা ছিল ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশের সদস্য। এই টিমের সদস্যরা ছিলেন হেড কনস্টেবল তেসোয়াং পালজোর, সুবেদার তেসোয়াং সামানলা, ল্যান্সনায়েক দোরজে মোরাপ এবং টিমের ডেপুটি লিডার ইন্সপেক্টর হরভজন সিং। এবারের শুরুর দিনটি খুব একটা ভালো ছিল না, খারাপ আবহাওয়ার জন্য বের হতে অনেক দেরি হয়ে যায়। প্রথম দুজন ছিলেন লাদাখি যুবক এবং অসাধারণ পর্বতারোহনের স্কিল। তবে পর্বতারোহনের জন্য ওদের বেরোতে বেরোতে সকাল ৮টা বেজে গিয়েছিল।

জাপানি দলের অসহযোগিতা

বেরোতে দেরি হবার জন্য তারা সামিট অবধি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। ঠিক হয়েছিল ডেথ জোনে ফিক্সড রোপ লাগিয়ে তারা চলে আসবে। শত বাধা-বিপত্তি, খারাপ আবহাওয়া এবং সবার বারণ সত্ত্বেও তিনজন সেই শক্তি গেছিল এভারেস্টের। কিন্তু ফেরাটা তাদের সুখকর হয়নি। তার উপর ছিল জাপানি দলের অবহেলা যা তাদের মৃত্যুর মুখে পৌঁছে দেয়। ১৯৯৬ সালের সবথেকে খারাপ তুষার ঝড়ে কেড়ে নিয়েছিল এদের প্রাণ। তেসোয়াং পালজোর, সুবেদার তেসোয়াং সামানলা, ল্যান্সনায়েক দোরজে মোরাপ এরা এভারেস্টের স্বপ্ন এর চূড়ায় বরফের তলায় শায়িত হয়ে আছে বছরের পর বছর।

না ফেরার কারণ

দলের সবথেকে অভিজ্ঞ পর্বতারোহীর কথা অমান্য করা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, আবহাওয়াকে গুরুত্ব না দেওয়া, এবার এসকে আর পাঁচটা সাধারন পর্বতের মতো মনে করা এবং জাপানি দলের অমানবিক আচরণ সবকটি ছিল এদের মৃত্যু অথবা না ফেরার অন্যতম কারণ। দ্রুত এভারেস্ট জয়ের আশায় তাদের জীবনশক্তি ক্রমশ ফুরিয়ে এসেছিল। প্রচন্ড ঠান্ডার কামড়, অক্সিজেনের অভাব, ক্লান্তি সব মিলিয়ে তারা নিজেদের মৃত্যু নিজেরাই ডেকে নিয়ে এসেছিল।

আসলে কে এই গ্রীন বুট? (Who is Green Boots)

সেই অভিশপ্ত দিনে তেসোয়াং পালজোর এই গ্রীন বুট পরেছিলেন। আজও তিনি সেই চুনাপাথরের গুহায় শুয়ে পর্বতারোহীদের এভারেস্টের পথ প্রদর্শন করেন। পালজোর ছিলেন লাদাখের এক গ্রাম সাকতির বাসিন্দা। পরিবারে একমাত্র আয় করার লোক এবং তার মার বড়খোকা। আইটিবিপিতে যোগ দেওয়ার পর তাকে পাহাড়ের নেশায় পেয়েছিল। সেই এভারেস্টের বুকেই সমাধি হলো তার। গ্রীন বুট আজও তার দায়িত্ব এ অবিচল।


এভারেস্টের গ্রীন বুটস (Everest Green Boots) সম্বন্ধে আরও জানতে পড়ুন উইকিপিডিয়ার এই পাতাটি

এই রকম আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পেজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *