বাংলায় ক্রিপ্টো-বৃতান্ত, জানুন ক্রিপ্টোকারেন্সির গোড়ার কথা

বাংলায় ক্রিপ্টো-বৃতান্ত, জানুন ক্রিপ্টোকারেন্সির গোড়ার কথা

দিন যতই এগোচ্ছে মানুষ ততই নতুনত্বকে স্বাগত জানাচ্ছে। আমরা এতদিন ক্রয় বিক্রয় তথা ব্যবসা বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে হাতে হাতে সরাসরি টাকার লেনদেন দেখে এসেছি। সম্প্রতি বেশ কয়েক বছর ধরেই এই সরাসরি টাকা লেনদেন পদ্ধতির পাশাপাশি মানুষ ঝুঁকছে অনলাইনে ফোনের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের প্রতি। ভাবতে অবাক লাগে যে, সঙ্গে একখানি স্মার্ট ফোন থাকলেই বর্তমানে পুরো বিশ্বকে জয় করে নেওয়া সম্ভব।

আজকে আরও একটি অবাক করা কথা বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করব এই প্রতিবেদনে। এতদিন যাবৎ আমরা সম্পত্তি বা অ্যাসেট বলতে আমাদের জমানো টাকা পয়সা বা জমি জায়গাকে বুঝে এসছি। কিন্তু এই অত্যাধুনিক টেকনোলজির যুগে ডিজিটাল অ্যাসেট (Digital Asset) বা অনলাইন সম্পত্তিও অধিকার করা সম্ভব হয় জানেন কি? এই ডিজিটাল অ্যাসেটের অন্যতম দাপ্তরিক নাভ হল ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)। ইতিমধ্যে বহু সংখ্যক মানুষ ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ সাধারন জনগনের কাছে শব্দটি সম্পূর্ণ অপরিচিত।

ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) কি?

প্রথমেই মনে যে প্রশ্নটি উঁকি মারছে, সেটি হল – ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? আসলে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একপ্রকার মুদ্রা। কিন্তু এই মুদ্রা শুধুমাত্র ইন্টারনেটের দুনিয়াতেই কার্যকরী। তাই একে ডিজিটাল মুদ্রা বা ভার্চুয়াল মুদ্রা (Virtual Mudra/Coin) বলা হয়ে থাকে। এই ধরনের কারেন্সিকে আমরা কখনোই সরাসরি দেখতে বা স্পর্শ করতে পারবো না। আমাদের টাকা যেমন ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে, সেরকমই ক্রিপ্টোকারেন্সি ডিজিটাল ওয়ালেটে সর্বদা সুরক্ষিত ও গচ্ছিত থাকে। এই ওয়ালেটের থেকে প্রয়োজনমতো এই ডিজিটাল মুদ্রা লেনদেন করা যায়।

যদিও এখনো অবধি ভারতীয় মুদ্রা বা বিদেশি ডলার ইত্যাদির মত এই ক্রিপ্টোকারেন্সি সরকারের নিয়ন্ত্রণের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি। এটি শুধুমাত্র অনলাইনে ক্রিপ্টোকারেন্সির অধিকর্তারাই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সি-এর অর্থ?

গোঁদা বাংলা ভাষায় বলতে গেলে, ক্রিপ্টোকারেন্সের মানে দাঁড়ায় ‘গুপ্ত অর্থ’। ক্রিপ্টো-এর (Crypto) বাংলা মানে হলো ‘গুপ্ত’। আর কারেন্সির (Currency) বাংলা মানে হলো ‘অর্থ’। এই দুইয়ে মিলে দাঁড়াল গুপ্ত অর্থ।

যদিও এই অর্থ সম্পূর্ণরূপে যথার্থ। তার কারণ ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন বা সঞ্চয় সর্বদাই গোপন থাকে। ক্রিপ্টোকারেন্সির ডিজিটাল ওয়ালেট সেই কারেন্সির অধিকর্তা ছাড়া অন্য কোন তৃতীয় ব্যক্তি কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবহার করতে পারেনা। যার ফলে এটিকে হামেশাই ‘গুপ্ত অর্থ’ বলে সম্বোধন করা যেতে পারে।

কিছু জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম

বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সির সংখ্যা চার হাজার ছাড়ালেও, ১০টি কারেন্সি আছে, যা বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করে প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছে।
• বিটকয়েন (Bitcoin)
• ইথেরিয়াম (Ethereum)
• টিথার (Tether)
• ইউ.এস. ডলার কয়েন (USD Coin)
• বাইনান্স কয়েন (Binance Coin)
• বাইনান্স ইউ.এস.ডি. (Binance USD)
• কারডানো (Cardano)
• এক্সআরপি (XRP)
• ডজকয়েন (Dogecoin)
• পলিগন (Polygon)

ক্রিপ্টোকারেন্সি-এর ইতিহাস

ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রচলন খুব বেশিদিন না হলেও, এর উৎপত্তি কিন্তু বহু বছর আগেই ঘটেছে। সালটি প্রায় ১৯৮৩, ডেভিড চৌম নামে এক ব্যক্তি প্রথম ইন্টারনেটের সহায়তায় আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে আলোকপাত করেন। শুরুটা ১৯৮৩ সালে হলেও, তার গবেষণা বাস্তবে রূপ নেয় ১৯৯৫ সালে।

এরপর ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়ায় প্রথম ঝড় তোলে ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামত নামক এক ব্যক্তি। তিনি প্রথম বিটকয়েন এর প্রচলন করেন। যদিও ২০২২ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সির সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় চার হাজার, তবুও বিটকয়েনের জনপ্রিয়তা সর্বদাই উচ্চ।

কিভাবে কার্যকরী হয় এই ক্রিপটোকারেন্সি?

ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ব্লকচেইন (Blockchain) নামক প্রযুক্তির হাতে। আমাদের অন্য একটি প্রতিবেদনে ব্লকচেইন প্রযুক্তি কি এবং তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা রয়েছে।

সাধারণত ব্যাংকে যেমন কম্পিউটারে সমস্ত গ্রাহকদের লেনদেনের তথ্য এবং নথি সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে ব্লকচেইনে এই কারেন্সির সমস্ত লেনদেনজনিত তথ্য সংরক্ষিত থাকে।

লেনদেনের জন্য কোন ব্যাংক অথবা কোন প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। একটি স্মার্ট ফোনই যথেষ্ট এই কারেন্সি লেনদেনের জন্য। তবে আপনাকে অবশ্যই একটি ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। একমাত্র এই একাউন্ট এর মাধ্যমে আপনি অন্য যে কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি অধিকর্তাদের সঙ্গে এই কারেন্সি লেনদেন করতে পারবেন।

যদিও পুরো পদ্ধতিটি গোপনীয়তা বজায় রেখেই সম্পন্ন হয়। আপনি কাকে কতটা কারেন্সি প্রদান করছেন বা তার থেকে কতটা কারেন্সি পাচ্ছেন, সেটি শুধুমাত্র আপনার এবং সেই ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য কোন তৃতীয় ব্যক্তি কোন রকম ভাবে কিছু জানতে পারবেন না।

ক্রিপ্টোকারেন্সি-তে কিভাবে লগ্নি করা যায়?

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করার পদ্ধতি খুবই সহজ। প্রথম ক্ষেত্রে আপনাকে আগে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে যে আপনি এমন একটি কারেন্সিতে টাকা ইনভেস্ট করতে চলেছেন, যেটি আপনি কখনো দেখেননি বা ছুঁতেও পারবেন না। যদি আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন, তবে ইনভেস্ট করতে পারেন।

• প্রথমে আপনাকে একটি বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম পছন্দ করতে হবে।
• দ্বিতীয়তঃ, এই প্লাটফর্মে আপনি আপনার সাধ্যমত টাকা দিয়ে ইনভেস্ট করে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে পারবেন।

এই রকম আরো অর্থনৈতিক সূলুক সন্ধান পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *