আপনি কি ব্লুটুথ ইয়ারফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত? হ্যাকিংয়ের শিকার হচ্ছেন না তো?

আপনি কি ব্লুটুথ ইয়ারফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত? হ্যাকিংয়ের শিকার হচ্ছেন না তো?

অত্যাধুনিক জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে মানুষের হাতে স্মার্ট ফোন আর ব্লুটুথ ইয়ারফোন দুটোই অত্যাবশক। ডিজিটাল টেকনলজির যুগে এই দুটো জিনিসের সাহায্য ছাড়া আমরা অচল। তাড়াতাড়ি যে কোন কাজ করতে গেলে স্মার্ট ফোন এবং ব্লুটুথ ইয়ারফোন দুটোই প্রয়োজন। কিন্তু যেখানে সুবিধা সেখানেই বিপদের সন্ধান মেলে। তবে স্মার্ট ফোন এবং ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহারে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে হ্যাকিং এর ঘটনা। গেজেট এর ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পেলেও অনেকক্ষেত্রে মানুষ তার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে এখনো পুরোপুরি ভাবে অবগত নয়।

ব্লুটুথ ইয়ারফোন / Bluetooth Earphones and Bluetooth settings can be the cause of your phone being hacked
হ্যাকিংয়ের ফাঁদ

বিপদ ব্লুটুথ ইয়ারপডে

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানুষের ব্লুটুথ ইয়ারফোন অথবা অন্যান্য ওয়ারলেস গ্যাজেটকে (gadget) কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার হ্যাকাররা হ্যাক করে নিচ্ছে তাদের স্মার্টফোনকে (smartphone)। এই ধরনের ওয়ারলেস গেজেটের নিরাপত্তা কিন্তু যথেষ্ট সংবেদনশীল। খুব সহজেই হ্যাকাররা এগুলোকে হ্যাক করতে পারে এবং তারপরেই ফোনে মেলওয়ার প্রবেশ করিয়ে ফোনের সমস্ত রকম ডেটা তারা সংগ্রহ করে ফেলে। তাই ডিজিটাল টেকনোলজি যতটাই আশীর্বাদ ততটাই অভিশাপ হয়ে ফিরে আসে মানুষের কাছে। সরাসরি আপনার ব্লুটুথ ইয়ারফোনটি হ্যাক না হলেও সেটির কারণে আপনার স্মার্টফোনটি যেকোনো সময় হ্যাক হতে পারে।

ব্লুটুথ ইয়ারফোনের কারণে কিভাবে হ্যাক হতে পারে স্মার্টফোন?

আসল সমস্যা হলো যে আমরা ব্লুটুথ ইয়ারফোন ব্যবহার করার পরে আমাদের ফোন বা ডিভাইসটির ব্লুটুথ বন্ধ করি না। অনেকেই বিনা প্রয়োজনে সব সময় তার ফোনের ব্লুটুথ অন করে রেখে দেন।

আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে ব্লুটুথ হ্যাকিংকে মূলতঃ দুটো ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হল ব্লু-জ্যাকিং / Bluejacking এবং অপরটি হলো ব্লু-বাগিং / Bluebugging। এছাড়াও ব্লুটুথের মাধ্যমে হ্যাকিং করার আরো কিছু পদ্ধিতি রয়েছে।

সাধারণতঃ হ্যাকাররা প্রথমে নির্দিষ্ট ইউজারদের ব্লুটুথ চালু রয়েছে এমন একটি ফোন কে টার্গেট করে নেয়। তারপর যখন সেই ফোন তাদের ১০ মিটার বা তার কাছের দূরত্বে আসে ,তখনই সেই ব্লুটুথ চালু থাকা ফোন এর সাথে কানেক্ট করার চেষ্টা করে। ব্রুট ফোর্স পেয়ারিং পদ্ধতির মাধ্যমে হ্যাকাররা এই হ্যাকিংটি সম্পন্ন করে। এটির অর্থই হচ্ছে, মূলত কানেক্টিভিটি কোড ক্র্যাক করার জন্য পার্মুটেশন – কম্বিনেশন এর মাধ্যমে সমস্ত রকম সম্ভব পাসওয়ার্ডগুলি প্রয়োগের প্রচেষ্টা করা, যেকোনো একটি কোড বা পাসওয়ার্ড মিলে গেলেই কেল্লা ফতে।

একবার যদি সাইবার অপরাধীরা সেই ফোনটির সাথে কানেক্ট করতে পারে তাহলে তারা ফোনটির মধ্যে ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার প্রবেশ করিয়ে উপস্থিত সমস্ত রকম ডাটা ,কল লিস্ট, মেসেজেস, কন্টাক্ট ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে খুব সহজেই। ব্যাংকিং অ্যাপ হ্যাক করে খুব সহজেই তারা ব্যাংকের লেনদেন কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এমনকি তারা যে মারাত্মক অপরাধ করে তা হল সেই ব্যক্তির ফোনে থাকা সমস্ত রকম ব্যক্তিগত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করা এবং টাকা চাওয়া।

কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করবেন ব্লুটুথ ইয়ারফোন ব্যবহারকারীরা?

বিভিন্ন রকম ওয়ারলেস ব্লুটুথ ডিভাইসেই হতে পারে এই ধরনের হ্যাকিং তাই ব্যবহারকারীদের অবশ্য সচেতন থাকতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করতে নিম্নলিখিত কয়েকটি পদক্ষেপ অবশ্যই পালনীয়।

  • যখনই আপনার ব্লুটুথ ইয়ারফোন বা ইয়ারপড ব্যবহার করা হয়ে যাবে সাথে সাথে সেটির ব্লুটুথ অফ করে দিন।
  • ব্লুটুথ সেটিংসে গিয়ে প্রথমে যে কাজটি অবশ্যই করবেন সেটি হল যদি আপনার ডিভাইসটি অন্য কোন ফোনে ভিজিবল হয় তাহলে সেই অপশনটি অবশ্যই আগে বন্ধ করবেন।
  • আপনার ফোনে যখন সফটওয়্যার আপডেট বলে অপশন আসবে তখন অবশ্যই সেটিতে ওকে করুন এবং সফটওয়্যার গুলো আপডেটের মাধ্যমে আপনি তাদের নিত্য নতুন সিকিউরিটির আওতায় পড়বেন।
  • মানুষ সব সময় চায় পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করতে কিন্তু এটি যে কত ক্ষতিকর হতে পারে তাদের পক্ষে সেটি তারা বুঝতে পারে না। তাই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করতে সব সময় বিরত থাকতে হবে।
  • কোন অপরিচিত ব্যক্তি বা পাবলিক প্লেসে  ডিভাইস পেয়ার করে ব্লুটুথ এর মাধ্যমে কোন আদান প্রদান করা যাবে না।
  • ফোনে আন্টি ভাইরাস ব্যবহার করতে হবে যা ফোনে উপস্থিত ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারকে ডিটেক্ট করতে পারে। এক্ষেত্রে গুগল প্লে প্রটেক্ট আমাদের খুবই কাজে লাগে। যা আমরা পেয়ে যাব গুগল প্লে স্টোরে।
  • ব্লুটুথ এ নিজের নাম কখনোই রাখবেন না এতে হ্যাকারদের ক্ষেত্রে খুবই সুবিধা হয়ে থাকে।
  • ব্লুটুথ ইয়ারফোন এর সাথে যে ডিভাইস গুলি কানেক্টেড থাকছে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, প্রয়োজন না থাকলে যেন সেই ডিভাইস গুলো বন্ধ থাকে।
  • কোন রকম গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল ডাটা ব্লুটুথ এর মাধ্যমে আদান-প্রদান করা চলবে না।

ব্লু-জ্যাকিং / Bluejacking সম্বন্ধে আরো পড়ুন -> https://en.wikipedia.org/wiki/Bluejacking

ব্লু-বাগিং / Bluebugging সম্বন্ধে আরো পড়ুন -> https://en.wikipedia.org/wiki/Bluebugging

এই ধরণের আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *