দোল পূর্ণিমা শুধুমাত্র বাঙ্গালীদের নয়, সব হিন্দু ধর্মের মানুষের কাছে একটি বিশিষ্ট দিন। অবাঙালিদের কাছে এটি ‘হোলি’ নামে পরিচিত। বসন্তকালে পালিত এই রঙের উৎসবে মেতে ওঠে গোটা ভারতবর্ষ। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে এই উৎসব। তবে দোল উৎসবের পিছনে অনেক অজানা তথ্য আমরা অনেকেই জানিনা। তাহলে চটজলদি জেনে নিন সেইসব কাহিনী ও দোল পূর্ণিমার ইতিহাস (History of Holi)।
সূচিপত্র (Table of Contents)
২০২৩ দোল উৎসবের সময় ও তারিখ
২১ শে ফাল্গুন অর্থাৎ ৬ ই মার্চ, সোমবার অপরাহ্ন ৪ টে বেজে ২০ মিনিটে পূর্ণিমা লাগবে এবং ২২ শে ফাল্গুন অর্থাৎ ৭ ই মার্চ, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা ০২ মিনিটে ছাড়বে।
সবার প্রিয় দোল উৎসব
এই দোল উৎসব বসন্ত কালে পালিত হয়ে থাকে বলে একে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। বসন্ত উৎসব পালন করা হয় ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে। এই দিনটি হল শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন লীলার মধ্যে অন্যতম। গোটা এক বছর মানুষ অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটির জন্য। এই দিনটিতে প্রত্যেকটি মানুষ নিজেকে বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তোলে।
হোলি ও দোল
মূলতঃ বাংলায় ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা পালন করা হয় থাকে। তবে বাদবাকি ভারতবর্ষ দোল যাত্রার পরের দিনটিকে হোলি হিসেবে গণ্য করে থাকে।
কোথায় পালন করা হয় এই উৎসব?
সাধারণত ভারতের সর্বত্র এই উৎসব পালিত হয়। তবে আজকাল দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে এই উৎসব। এই দিনটি হল আনন্দ ও খুশির দিন। প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে এই উৎসবে মেতে ওঠে মানুষ। তবে বিশেষ বিশেষ কিছু জায়গায় খুব ধুমধাম এর সাথে এই উৎসবকে পালন করা হয়, যেমন শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত বসন্ত উৎসব, শান্তিপুর, নবদ্বীপ, মায়াপুর, বৃন্দাবন, মথুরা প্রভৃতি জায়গায় দোল উৎসব অথবা হোলি উৎসব খুব গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়।
দোলের তাৎপর্য
হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে দোল উৎসবের এই পৃথিবী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর মানুষ তাদের গৃহে এই দিন গোপাল পুজো করে থাকেন। এছাড়াও দোল পূর্ণিমার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ হলো আরেকটি কারণে। এছাড়া দোল পূর্ণিমার ইতিহাস (History of Holi) ঘাঁটলে দেখা যায় যে শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এই দিনটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
দোল উৎসবের উৎপত্তির ইতিহাস (History of Holi)
দোল উৎসবের ইতিহাসে (History of Holi) কথিত আছে দ্বাপর যুগে কোশি এবং অরিষ্টাসুর নামের দুজন দৈত্যের তাণ্ডবে ভীত ও তটস্থ হয়ে উঠেছিল মথুরাবাসী। প্রাণে মারা পড়ার আতঙ্কে তাদের এক একটি দিন অতিবাহিত হচ্ছিল। এই সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে শেষ পর্যন্ত মথুরাবাসী একত্রিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের কাছে আবেদন করেন। মথুরাবাসীর আবেদন রাখতে ফাল্গুনী পূর্ণিমার ঠিক আগের দিন শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে বলরাম ও শ্রীকৃষ্ণ এই দুই দৈত্যকে হত্যা করেন। সমগ্র মধুরাবাসী ওই দুই দৈত্যের রক্ত ছিটিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। সেই থেকে দোল উৎসবের উৎপত্তি।
তবে দোলযাত্রা বা হোলির ইতিহাসের (History of Holi) অন্য এক মত অনুযায়ী, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ নিজেই এই উৎসবের উৎপত্তি করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনের আম্রকুঞ্জে শ্রী রাধিকা এবং তার গোপীদের সাথে এই আবির ও রং নিয়ে এর দোল উৎসব পালন করতেন। তার থেকেই এই উৎসবের প্রচলন ঘটে।
হোলিকা দহন (Holika Dahan) / ন্যাড়াপোড়া / বুড়ির ঘর পোড়ানো / চাঁচর
দোল উৎসবের ইতিহাস (History of Holi) অনুযায়ী, বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী প্রাচীন কালে হিরণ্যকশিপু নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। তার পুত্রের নাম ছিল প্রহ্লাদ। তিনি ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত। কিন্তু বাবা হিরণ্যকশিপু বিষ্ণুর পরম শত্রু হওয়াতে, তিনি বারবার তার পুত্রকে বিষ্ণুর গুনগান করতে বিরত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু কিছুতেই প্রহ্লাদ তার বাবার কথা কানে তোলে না। শেষ পর্যন্ত হিরণ্যকশিপু নিজের পুত্রকে বিষ্ণুর নাম নেওয়ার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু কোনভাবেও প্রহ্লাদকে মারতে না পেরে শেষ পর্যন্ত হিরণ্যকশিপু তার বোন হোলিকাকে নির্দেশ দেন সে যেন নিজের কোলে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনের মধ্যে প্রবেশ করেন।
দোল পূর্ণিমা বা হোলির ইতিহাসে (History of Holi) কথিত আছে যে হোলিকা দেবতাদের কাছ থেকে বর পেয়েছিলেন যে আগুন কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করার অপরাধে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করার সাথে সাথে হোলিকা আগুনে পুড়ে মারা যায়। কিন্তু প্রহ্লাদের কোন ক্ষতি হয় না। সেই দিনটি ছিল ফাল্গুনী চতুর্দশী। তারপর থেকে এই দিনটিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির রক্ষার দিন হিসাবে হোলিকা দহন নামে পালিত হয়ে আসছে। বাংলায় সাধারণতঃ একে ন্যাড়াপোড়া, বুড়ির ঘর পোড়ানো, কিংবা চাঁচর নামে ডাকা হয়।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
আসলে দোল হল ভারতীয় রীতি অনুযায়ী বছরের শেষ উৎসব। বসন্তকালে পালিত হওয়া এই উৎসবের ঠিক আগের দিন হোলিকা দহন পালন করা হয়। একে স্থান ভেদে ন্যাড়াপোড়া, বুড়ির ঘর, কিংবা চাঁচর নামেও ডাকা হয়ে থাকে। মূলত এই সময়ে পাতা ঝরা উদ্ভিদেরা তাদের প্রচুর শুকনো পাতা, ডালপালা নিষ্কাশন করে। যাতে পরিবেশে জঞ্জাল বেড়ে যায়। তাই মনে করা হয়ে থাকে পুরাকালে উৎসবের নামে সমস্ত জঞ্জাল পুড়িয়ে, রুক্ষতা শুষ্কতাকে সরিয়ে পুরাতনের বিদায়ে এবং নতুনের আহ্বানের এই উৎসবের প্রচলন করা হয়।
শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত বসন্ত উৎসব
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই দিনটি সবাই রঙে রঙে মেতে ওঠে। ধর্মীয় দিক ছাড়াও শান্তিনিকেতনে এই দিনটিকে জমজমাট বসন্ত উৎসব হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পালন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমল থেকেই এই উৎসব পালন করা শুরু হয়েছিল শান্তিনিকেতনে। আজও রবি ঠাকুরের গান, নৃত্যগীতির সাথে পালন করা হয় এই উৎসবটি।
দোল পূর্ণিমার ইতিহাস (History of Holi) সম্বন্ধে আরো জানতে পড়ুন -> en.wikipedia.org/wiki/Holi
আরো খবর জানতে অবশ্যই চোখ রাখতে হবে বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পেজে।