Q Fever / Q Virus: করোনার পর নতুন আতঙ্কের নাম ‘Q জ্বর’ এবং ‘Q ভাইরাস’

Q Fever / Q Virus: করোনার পর নতুন আতঙ্কের নাম ‘Q জ্বর’ এবং ‘Q ভাইরাস’

করোনা ইবোলা সার্চ ইত্যাদি ভাইরাসের মহামারির পর ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে ইদানিং কালে মানুষের আতঙ্ক বহুগুণ বেড়েছে। দুই বছর আগের করোনা ভাইরাসের পর এবার আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে Q জ্বর (Q Fever)। তবে এবার আর বদনামের ভাগীদার চীনকে হতে হচ্ছে না। এর জন্যে দায়ী করা হচ্ছে Q ভাইরাসকে (Q Virus) এবং অদ্ভুত নামের এই পরজীবীটি পাওয়া গিয়েছে, আমাদের দেশের হায়দরাবাদ শহরেই। সেখানে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে কিউ জ্বর বা Q জ্বর।

কি এই Q জ্বর (What is Q Fever)?

জ্বরটির পোশাকি নাম হল Q জ্বর বা কিউ জ্বর। Q ‘ভাইরাস’কে এর জন্যে দায়ী করা হলেও কিউ জ্বর আসলে একটি ‘ব্যাকটেরিয়া’ ঘটিত রোগ। ব্যাকটেরিয়াটি একটি অন্তঃকোষীয় প্যাথোজেনিক পরজীবী। জ্বরটির নামটা শুনতে উদ্ভট হলেও এর প্রকৃত নাম কোয়েরি জ্বর (Query Fever)। এর জন্যে দায়ী ব্যাকটেরিয়াটির প্রকৃত নাম হচ্ছে কক্সিলা বার্নেটি (Coxiella Burnetii)। ১৯৩৭ সালে অস্ট্রেলিয়াতে এডওয়ার্ড হলব্রুক ডেরিক (Edward Holbrook Derrick) এক বিশেষ ধরণের কোয়েরি জ্বর (Query Fever) অসুস্থতা বর্ণনা করার জন্য “কিউ জ্বর” (Q Fever) শব্দটি প্রথম বারের জন্যে প্রস্তাব করেছিলেন।

Q Fever / Q Virus সংক্রমণ ছড়াতে পারে গৃহপালিত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের থেকে
Q Fever / Q Virus সংক্রমণ ছড়াতে পারে গৃহপালিত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের থেকে

কিভাবে সংক্রমিত হয়?

বিভিন্ন গবাদি পশু, ভেড়া, ছাগল এবং বিড়াল এবং কুকুর সহ অন্যান্য গৃহপালিত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়াটি পাওয়া যায়। স্পোর-সদৃশ ছোট-কোষের ন্যায় এই ব্যাকটেরিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এবং সংক্রামিত প্রাণীর দুধ, প্রস্রাব, মল, যোনি শ্লেষ্মা বা বীর্যের সংস্পর্শে এলে মনুষ্য দেহে এর সংক্রমণ ঘটে। এই ব্যাকটেরিয়ার ইনকিউবেশন সময়কাল ৯ থেকে ৪০ দিন।

কারা আক্রান্ত হচ্ছেন?

যেহেতু ভেড়া বা ছাগল জাতীয় গবাদি পশুর শরীরে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যে সমস্ত মানুষজন এই ধরনের গবাদি পশুর সংস্পর্শে দীর্ঘক্ষণ থাকেন তাদের এই কিউ জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে কসাইখানায় কর্মরত কর্মীদের মধ্যে এই রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে।

Q জ্বরের উপসর্গ কী (Q Fever symptoms) ?

Q ভাইরাস (Q Virus), যা আসলে এক প্রকারের ব্যাকটেরিয়া, এটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ। এই জ্বরের লক্ষণ গুলি সাধারণ ফ্লু-এর মতো। হঠাৎ জ্বর আসা, অস্থিরতা, প্রচুর ঘাম দেওয়া, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া, উপরের শ্বাস নালীর সমস্যা, শুকনো কাশি, প্লুরিটিক ব্যথা, ঠান্ডা লাগা, বিভ্রান্তি এবং কিছু গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণ যেমন, বমি বমি ভাব, বমি এবং ডায়রিয়া। তবে প্রায় অর্ধেক সংক্রামিত রোগীর ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ প্রকাশ পায় না।

ঝুঁকি

কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি একটি অ্যাটিপিকাল নিউমোনিয়া তৈরি করে, যার ফলে রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হয় এবং রোগীর জীবন-হুমকির মুখে পড়তে পারে। তবে এই ধরনের লক্ষণগুলি সাধারণত সংক্রমণের প্রথম চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দেখা যায়।

এছাড়াও কিউ জ্বরের (Q Fever) কারণে (গ্রানুলোমাটাস) হেপাটাইটিস হতে পারে। ফলে জ্বর, লিভারের বৃদ্ধি এবং পেটের উপরের ডান দিকে ব্যথা অনুভব হতে পারে। জন্ডিসের সাধারণ লক্ষণ গুলি প্রকাশ পাবে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে রেটিনাল ভাস্কুলাইটিসের লক্ষণও প্রকাশ পেতে পারে।

মৃত্যু হার (Death Rate)

রোগী Q জ্বরে (Q Fever) দীর্ঘদিন ধরে ভুগলে এন্ডোকার্ডাইটিস (হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ আস্তরণের প্রদাহ) হতে পারে। যা মূলত কয়েক মাস টানা সংক্রমণে ভুগলে ঘটতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে উপযুক্ত সময়ে চিকিৎসা করালে মৃত্যুহার প্রায় ১০% এ নামিয়ে আনা সম্ভব।

কিউ জ্বরের সংক্রামকতা

হায়দরাবাদের ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন মিট একটি সমীক্ষা চালিয়ে জানিয়েছে, বর্তমানে হায়দরাবাদ শহরের কসাইখানায় কর্মরত কর্মীদের প্রতি ৫০ জনের মধ্যে ১ জন এই Q জ্বরে আক্রান্ত। তবে স্বস্তির বিষয় একটাই যে এই কিউ জ্বরে আক্রান্ত ১০০ জন রোগীর মধ্যে মাত্র পাঁচজনের শরীরে সিটাকোসিস (Psittacosis) এবং হেপাটাইটিস E (Hepatitis E) এর জীবাণুর হদিশ পাওয়া গিয়েছে। মূলত তোতা জাতীয় পাখির থেকেই সিটাকোসিস এর ব্যাকটেরিয়া মানুষের দেহে প্রবেশ করে।

দুশ্চিন্তার কারণ

ইতিমধ্যে হায়দরাবাদ শহরে Q জ্বর (Q Fever) ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। শুরুতেই এই জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।


কিউ জ্বর (Q Fever) সম্বন্ধে আরো জানতে পড়ুন উইকিপিডিয়ার এই পাতাটি -> https://en.wikipedia.org/wiki/Q_fever

এইরূপ আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *