Turkey Earthquake: কেন এত ধ্বংসাত্মক হল তুরস্কের ভূমিকম্প? মৃত্যু মিছিলের কারণ কি?

Turkey Earthquake: কেন এত ধ্বংসাত্মক হল তুরস্কের ভূমিকম্প? মৃত্যু মিছিলের কারণ কি?

তুরস্কের ভূমিকম্প (Turkey Earthquake) কেনো এত ধ্বংসাত্মক হল? এই প্রতিবেদনে কারণগুলি আলোচনা করা হলো।

পৃথিবীর উপরিভাগটি বেশ শক্ত। যা মাটি, কাদা, কাঁকর, বালি, পাথর ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত। কিন্তু এখনও এর অভ্যন্তর এখনও কাঁচা, সেখানে রয়েছে গলিত ম্যাগমা। যখন সেগুলি উপরে ওঠার কোনো ছিদ্র পথ পায় তখন তা সেই পথ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে অগ্নুৎপাত বলে। আর পৃথিবীর উপরের এই শক্ত ভাগটি কয়েকটি প্লেটের উপর ভেসে বেড়াচ্ছে। এই প্লেটগুলিকে বলা হয়ে থাকে টেকটনিক প্লেট। সমগ্র পৃথিবীর উপরিভাগ এই রকম প্রায় ৭০ টির বেশি টেকনিক প্লেট এর উপর অবস্থিত।

ভূমিকম্প কি?

ভাসতে ভাসতে প্লেট গুলি কখনো একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়, আবার একই রকম ভাবে প্লেট গুলি কখনো কখনো নিজেদের কাছে চলে আসে এবং একে অপরের সঙ্গে ঠোকা ঠুকি লাগে। এই সংঘর্ষ এতটাই জোরালো হয় যে মাটির উপরিভাগ কেঁপে ওঠে আর এর ফলেই সৃষ্টি হয় ভূমিকম্পের। কখনো কখনো দুটি প্লেটের ধাক্কা লাগার স্থানে দুমড়ে মুচড়ে তৈরি হয় পর্বতমালা, যেমন হিমালয় পর্বত। আবার কখনো কখনো দুটি প্লেট সরে গিয়ে তার মাঝে তৈরি হয় সাগর।

ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা

আর যখনই ভূমিকম্প হয় তখনই ধ্বংসলীলা চলে মাটির উপরে তৈরি হওয়া মানব সভ্যতায়। সেখানে তৈরি হওয়া স্থাপত্য, ভাস্কর্য সহ প্রাণের। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা হবে সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে ভূমিকম্প কোথায় হচ্ছে, সেই স্থানের অবকাঠামো, জনবসতির ঘনত্ব এবং ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল উপরিভাগ থেকে কতটা নিচে তার উপরে। তবে ভূমিকম্প কতটা ধ্বংসাত্মক হবে তা টেকনিক প্লেটের সঞ্চালন ছাড়াও ভূমিকম্পে সৃষ্টি হওয়ার তরঙ্গের প্রকৃতির উপরেও নির্ভর করে।

তুরস্কের ভূমিকম্প - Turkey earthquake
তুরস্কের ভূমিকম্প – Turkey earthquake (Tectonic plate movements)

তুরস্কে টেকটনিক প্লেটের গতি প্রকৃতি (Turkey Earthquake Tectonic Plate Movements)

তুরস্ক দেশটির অধিকাংশ অংশই রয়েছে অ্যানাটোলিয়ান নামক একটি টেকটনিক প্লেটের উপর রয়েছে। যদিও এই প্লেটটি আকারে বেশ ছোট হওয়ায় একে অ্যানাটোলিয়ান মাইক্রোপ্লেট ও বলা হয়ে থাকে। এই প্লেটের উত্তর ও পশ্চিম দিক ঘিরে রয়েছে ইউরেশীয় প্লেট, দক্ষিণ দিক ঘিরে রয়েছে আফ্রিকান প্লেট এবং পূর্ব দিকে রয়েছে আরবীয় প্লেট। এদের মধ্যে আরবীয় প্লেটটির সঞ্চালনের গতি উত্তর-পশ্চিম দিকে অ্যানাটোলিয়ান প্লেটের দিকে। এর পাশাপাশি আফ্রিকান প্লেটটিও উত্তর পূর্ব দিকে সঞ্চালিত হয়ে মাঝেমাঝেই ধাক্কা দেয় আরবীয় প্লেটের গায়ে। আর তখনই আরবীয় প্লেট এবং এনাটলিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে সংঘর্ষ হয় এবং মাঝে মাঝেই কেঁপে ওঠে গোটা তুরস্ক।

তরঙ্গের প্রকৃতি

ভূমিকম্প প্রবন এলাকায় অবস্থিত হওয়া সত্বেও এর আগের ভূমিকম্প গুলিতে খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হতে দেখা যায়নি তুরস্ককে। কিন্তু এই বারের তুরস্কের ভূমিকম্পে (Turkey Earthquake) ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ খুব বেশি হওয়ার পিছনে ভূমিকা রয়েছে কম্পনে সৃষ্ট হওয়া তরঙ্গের প্রকৃতির ওপরে। এই টেকনিক প্লেট গুলির নড়াচড়ার ফলে যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় সেগুলি প্রাথমিকভাবে দুটি ধাপে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেকটি ধাপের আবার দুটি করে তরঙ্গ রয়েছে। প্রথম ধাপ হল গ্রাউন্ডস ওয়েভস এবং দ্বিতীয় ধাপ হল সারফেস ওয়েভস

গ্রাউন্ড ওয়েভস

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রাথমিকভাবে যে তরঙ্গ গুলি সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় গ্রাউন্ড ওয়েভস। এটি মূলত দু ধরনের হয়ে থাকে। এক টিকে বলা হয় পি ওয়েব এবং অন্যটিকে বলা হয় এস ওয়েভ। এদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতির ওয়েব টিকে বলা হয় পি ওয়েব। এটি স্প্রিং এর মতো সংকোচন প্রসারণ এর মাধ্যমে কেন্দ্রস্থল থেকে দূরবর্তী স্থানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এই ওয়েব টি প্রচন্ড শক্তি বহন করে। ওপর দিকে ধীরগতির ওয়েব টিকে বলা হয় এস ওয়েভ। এই ওয়েব টি ঢেউ খেলানোর টিনের মতো করে এগোতে থাকে। ততটা শক্তি বহন না করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি ভূমির আকৃতি বদলে দিতে পারে।

সারফেস ওয়েভস

ভূমিকম্পের দ্বিতীয় ধাপের মধ্যে পড়ে সারফেস ওয়েব সারফেস ওয়েব দুই ধরনের তরঙ্গ থাকে একটিকে বলা হয় রেলিগ ওয়েভ এবং অন্যটিকে বলা হয় লাভ ওয়েভ। রেলিগ ওয়েভ দেখতে অনেকটা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। কোন স্থির জলে যদি ঢিল মারা হয় যেভাবে তরঙ্গ গুলি কেন্দ্রস্থল থেকে দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, রেলিগ ওয়েব দেখতে তেমন টাই হয়ে থাকে। এই ওয়েব অত্যন্ত শক্তিশালী এবং প্রচুর পরিমাণে ধ্বংসলীলা চালায়। লাভ ওয়েব দেখতেও অনেকটা রেলিগ ওয়েভের মত। তবে লাভ ওয়েভের ধ্বংসলীলা ক্ষমতা সবথেকে বেশি।

তুরস্কের ভূমিকম্পের কারণ (Turkey Earthquake Reason)

তুরস্কের যে অতি ভারীমাত্রায় ধ্বংসলীলা চলেছে তার মূল কারণ হল রেলিগ ওয়েব। যে কারণে তুরস্কের প্রাণ হানি এবং সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা এত বেশি। তবে শুধু তুরস্ক নয় এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরিয়াও। শেষ খবর পাওয়া অবধি দুই দেশ মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানাচ্ছে উদ্ধারকার্য যত সামনে এগোবে মৃতের সংখ্যা ততই বাড়বে।

তুরস্কের ভূমিকম্পের স্থান (Turkey Earthquake Epicentre)

তুরস্কের গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগি থেকে ২৩ কিলোমিটার (১৪.২ মাইল) পূর্বে, ভূমির উপরিভাগ থেকে ২৪.১ কিলোমিটার (১৪.৯ মাইল) গভীরতায় এরাবিয়ান প্লেট এবং এলাটলিয়ান প্লেটের বিচ্যুতি স্থানে এই ভূমিকম্প সংগঠিত হয়। স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪ টে নাগাদ এই ভূমিকম্প এসে আঘাত করে ভূমির উপরিভাগে। স্কেলে এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭.৮ মাত্রা। মূল ভূমিকম্পের পর প্রায় ৫০ টি আফটারশক দেখা গিয়েছে ওই এলাকাতে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ফিলিপিন্সের ভূবিজ্ঞানী রেনাটো সালিডমের মতে, একটি ৭ মাত্রার তীব্রতার ভূমিকম্প থেকে যে পরিমাণ শক্তি সৃষ্টি হয় তা হিরোশিমায় নিক্ষেপ করা পরমাণু বোমার থেকে সৃষ্ট শক্তির ৩২ গুণ বেশি। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ভূমি কম্প বিশেষজ্ঞ জানুকা আট্টানায়ক বলেন রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার যে কোন ভূমিকম্প অত্যন্ত ভয়ংকর। সেখানে তুরস্কে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের ছিল ৭.৮ মাত্রার, যা অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। এই ধরনের ভূমিকম্প ৫.৯ তীব্রতার কোনো ভূমি কম্পের থেকে প্রায় ৭০৮ গুণ বেশি শক্তিশালী। এই ধরনের ভূমিকম্পের ফলে যে শক্তি নির্গত হয় তার পরিমাণ প্রায় ৩২ পেটাজ়ুল। যা দিয়ে নিউ ইয়র্কের মতো একটি অত্যাধুিক শহরে চার দিনের বিদ্যুত্‍ খরচ মেটানো সম্ভব।


তুরস্কের ভূমিকম্প (Turkey Earthquake) সম্বন্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্যে দেখুন U.S. Geological Survey (USGS) এর পক্ষ থেকে প্রকাশিত এই পাতাটি -> https://earthquake.usgs.gov/earthquakes….

এইরকম আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *